উচ্চতার ভয়। শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা। একটু দৌড়াতেই হাঁফিয়ে ওঠা। বলিভিয়ার মাটি সব দলের জন্য যেন দুর্ভেদ্য। উল্টো হালি হালি গোল হজমই যেন নিয়তি। দীর্ঘদিন পরে হলেও স্রোতের বিপরীতে নতুন ইতিহাস গড়ল মেসির আর্জেন্টিনা। ১৫ বছর পর বলিভিয়া জয় করল লিওনেল স্কালোনির দল। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে মঙ্গলবার রাতে বলিভিয়াকে ২-১ গোলে পরাজিত করেছে আর্জেন্টিনা।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৬০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত লাপাজের স্টেডিয়াম। বেশি উচ্চতার কারণে অক্সিজেন কম। অনভ্যস্ত সফরকারী দলের খেলোয়াড়রা তাই খাবি খায় সেখানে। পরিচিত কন্ডিশনে সেখানে ছড়ি ঘোড়ায় বলিভিয়ার ফুটবলাররা। ব্রাজিল একবার লাপাজে ড্র করার পর নেইমার বলেছিলেন, ‘এখানে খেলাটা খুবই অমানবিক।’
এমন ভেন্যুতে মঙ্গলবার মাঠে নামার আগে আর্জেন্টিনার কোচ স্কালোনি বলেছিলেন, এই মাঠে ন্যুনতম হার এড়াতে লড়বে তার দল। মানে ড্র হলেই খুশি। হারলেও দায় তেমন থাকবে না। কিন্তু স্কালোনির শিষ্যরা দারুণ চমকই উপহার দিলেন তাকে। ২০০৫ সালের পর বলিভিয়ার মাঠে জয় পেল আর্জেন্টিনা। ১৫ বছর আগের জয়ে আর্জেন্টিনার স্কোয়াডে ছিলেন স্কালোনি, আজ তিনি আর্জেন্টিনার কোচ। আবেগাপ্লুত হতেই পারেন তিনি।
ম্যাচের প্রথম ত্রিশ মিনিট আর্জেন্টিনার জন্য ছিল ভয়ংকর। অনেকটাই ক্লান্ত লাগছিল মেসিদের। এই সুযোগে ২৪ মিনিটে এগিয়েও যায় বলিভিয়া। আলেজান্দ্রো সাউলের চমৎকার ক্রসে জাল খুঁজে নেন মার্সেলো মার্টিন্স (১-০)। সাত মিনিট পর বাড়তে পারত ব্যবধান। মার্টিন্সের ক্রসে হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি কার্লোস সাউসেদো।
এরপর যেন আস্তে আস্তে বদলে যায় আর্জেন্টিনা। গা ঝাড়া দিয়ে খেলার গতি বাড়ায় সফরকারীরা। ৩৬ মিনিটে লুকাস ওকাম্পোসের শট একজনের গায়ে লেগে দিক পাল্টে একটুর জন্য জালে যায়নি। চার মিনিট পর পারদেসের শট ব্যর্থ হয় পোস্টে লেগে।
বলিভিয়ার রক্ষণকে চেপে ধরা আর্জেন্টিনা সমতাসূচক গোলের দেখা পায় প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে। বাঁ দিক থেকে মার্টিনেজ খুঁজে নিতে চেয়েছিলেন ওকাম্পোসকে। মাঝপথে ঠেকিয়ে দেন কারাসকো। তার শট সফরকারী স্ট্রাইকারের পায়ে লেগে বল জড়ায় জালে। স্কোর সমান ১-১।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে উঠে দ্বিতীয়ার্ধ। ৬০ মিনিটে বিপজ্জনক জায়গা থেকে ফ্রি-কিক কাজে লাগাতে পারেননি মেসি। সাত মিনিট পর এসেকিয়েল পালাসিওসের রক্ষণচেরা এক পাসে সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান মার্টিনেজ। সামনে ছিলেন কেবল বলিভিয়ার গোলরক্ষক। কিন্তু তার নেয়া শট চলে যায় বারের উপর দিয়ে।
৭৫ মিনিটে আবার সুযোগ পেয়েছিলেন মার্টিনেজ। মেসির দুর্দান্ত পাসে সামনে পেয়েছিলেন কেবল গোলরক্ষককে। বার ঘেঁষে শট নিলে হয়তো জালের দেখা পেতেন। কিন্তু মাঝ বরাবর শট নেওয়ায় ঝাঁপিয়ে ব্যর্থ করে দেন বলিভিয়ান গোলরক্ষক।
৭৯ মিনিটে জয়সূচক গোল পায় আর্জেন্টিনা। প্রতিপক্ষের একজন বল হারালে পেয়ে যান মেসি। অধিনায়কের বাড়ানো বল ধরে মার্টিনেজ বাড়ান খানিক আগে বদলি নামা কোরেয়াকে। তার বুলেট গতির শট কাঁপায় বলিভিয়ার জাল। উল্লাসে মাতে গোটা আর্জেন্টিনা।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত সময় ৮ মিনিট দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে বলিভিয়া চেষ্টা চালিয়েছে যথাসাধ্য। কিন্তু ভাঙতে পারেনি আর্জেন্টিনার রক্ষণদেয়াল। দারুণ, সুখকর এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা।
সব মিলে টানা ৯ ম্যাচ অপরাজিত আর্জেন্টিনা। ইকুয়েডরকে ১-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ বাছাই মিশন শুরু করা আর্জেন্টিনা রয়েছে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে (ব্রাজিল-পেরু ম্যাচের আগের হিসাব)। দুই জয়ে ছয় পয়েন্ট দু'বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।
সূত্রঃ নয়া দিগন্ত অনলাইন