বিশ্বের শীর্ষ ১০ সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত ফুটবলার যারা

ফুটবল দুনিয়া September 6, 2021 1,094
বিশ্বের শীর্ষ ১০ সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত ফুটবলার যারা

প্রথম সারির ফুটবলারের এক সপ্তাহের আয় দেখলেই অনেকের চোখ কপালে ওঠার মতো দশা হয়। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক সাময়িকী ‘রেডিও টাইমস’ সেরকমই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে বর্তমান সময়ের শীর্ষ সাপ্তাহিক পারিশ্রমিক প্রাপ্ত ফুটবলারের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে।


১০। রবার্ট লেভানডভস্কি (বায়ার্ন মিউনিখ)


৩২ বছর বয়সী লেভানডভস্কি এখনো টগবগে যুবকের মতো বায়ার্ন মিউনিখের জন্য গোল মেশিনের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। গেল বছরে ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের ট্রফিটিও তাই গিয়েছিল তারই হাতে। জার্মান ক্লাবটিও তাই তাদের মোট বরাদ্দের মোটা অংশ ব্যয় করছে বুন্দেসলিগার সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়টির পেছনে। ‘রেডিও টাইমস’ – এর হিসাব মতে লেভি প্রতি সপ্তাহে সাড়ে তিন লাখ ইউরো বা ৩,৫৪,০৬,৪০৫.১৬ টাকা পাচ্ছেন নিজের দল থেকে। যদিও এতো কিছুর পরও সম্প্রতি ক্লাব ছাড়তে চেয়েছিলেন তিনি।


৯। ডেভিড ডি গিয়া (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)


ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই তারকা গোলকিপারের বেতন বিশ্বের অন্য যেকোনো গোলকিপারের চেয়ে ঢের বেশি। একারণেই তালিকায় নবম স্থানটি পেয়েছেন তিনি। অবশ্য ডেভিডের ওল্ড ট্রাফোর্ড চুক্তিতে তাকে সপ্তাহ প্রতি প্রায় চার লাখ ইউরোর মতো পরিশোধ করত ম্যান ইউ, যা তাকে মোটা রকমের বার্ষিক আয় পেতে সাহায্য করত। যদিও গত আসরে বেশকিছু বড় ভুলের জন্য দলে তার অবস্থান কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল, তবে চলতি মৌসুমে দারুণভাবে ফিরে তিনি সেই শঙ্কা দূর করে দিয়েছেন। অবশ্য এর প্রভাবে চলতি আসরে তার আয় নেমে দাঁড়িয়েছে ৩,৭৫,০০০ ইউরোতে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩,৭৯,৩৫,৪৩৪.১০ টাকা।


৮। কেভিন ডি ব্রুন (ম্যানচেস্টার সিটি)


ডি ব্রুন সম্প্রতি তার দল ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেছেন, যা তাকে প্রিমিয়ার লীগের শীর্ষ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত খেলোয়াড়ের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। এমনকি তার দুই তারকা সতীর্থ রহিম স্টার্লিং ও জ্যাক গ্লিচের সাপ্তাহিক আয়ও তার তুলনায় প্রায় ৮৫০০০ ইউরো কম। ম্যান সিটির এই দুই তারকা যেখানে সপ্তাহে প্রায় তিন লাখ ইউরো ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যোগ করছেন, সেখানে ডি ব্রুনের আয় ৩ লাখ ৮৫ হাজার ইউরো বা ৩,৮৯,৪৭,০৪৫.৬৮ টাকা। অন্যদিকে বেলজিয়ামের এই তারকা যেহেতু তার সেই সাম্প্রতিক চুক্তিতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চুক্তির নবায়ন করেছেন, তাই ব্যাপারটি ম্যান সিটি এবং পেপ গার্দিওলার জন্য স্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


৭। কিলিয়ান এমবাপ্পে (প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন)


২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে ৪ গোল নিয়ে ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ জিতানোর পর কিলিয়ান এমবাপ্পে ভবিষ্যত প্রজন্মের অন্যতম সম্ভাবনাময় তারকা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। একই বছর মোনাকো থেকে পিএসজিতে আসেন তিনি, যা এখনো অবধি ক্লাব ফুটবলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি দলবদলের রেকর্ড। আবার পিএসজির জার্সিতেও ইতোমধ্যে শতাধিক গোলের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। বিশ্বখ্যাত জুতা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘নাইকি’ এর অন্যতম পোস্টার বয় এমবাপ্পের বর্তমান আয় সপ্তাহ প্রতি ৪,১০,০০০ ইউরো বা ৪১৪৭৬০৭৪.৬২ টাকা।


৬। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)


দীর্ঘ এক যুগ পর যৌবনের স্মৃতিবিজরিত ম্যানচেস্টার শহরে ফিরে এসেছেন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ক্যারিয়ারের প্রায় শেষ মুহূর্তে থাকা সি আর সেভেনকে বেশ যত্ন করেই ফিরিয়ে এনেছে দলটি। তবে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দামি খেলোয়াড়ের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে জায়গা পাননি তিনি। সপ্তাহ প্রতি প্রায় ৪,৮০,০০০ ইউরো বা ৪,৫৩,২০,১৯৮.৬০ টাকা বেতন নিয়ে তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছেন এই পর্তুগিজ ডিফেন্ডার। এছাড়াও নিজের ব্র্যান্ড ‘সিআরসেভেন’ ও নাইকি এবং হার্বালাইফ থেকেও মোটা অঙ্কের টাকা পান তিনি। রোনালদোর বার্ষিক আয় প্রায় ৩১ মিলিয়ন ইউরোর মতো। অবশ্য ‘রেডিও টাইমস’ যেহেতু রোনালদোর সাবেক ক্লাব জুভেন্টাসের বেতন দিয়ে তালিকাটি তৈরি করেছে, তাই সেখানে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন তিনি।


৫। গ্রেথ বেল (টটেনহাম)


একসময়ের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় গ্রেথ বেলের দিনকাল এখন ভালো যাচ্ছে না। চলতি মৌসুমে (২০২০-২১) রিয়েল মাদ্রিদ তাকে ঋণে টটেনহামে পাঠানোর পর থেকেই তার দুর্দিনের শুরু। হোসে মরিনহোর দলে অভিষিক্ত হবার পর থেকে ফুটবল প্রেমিদের ভালো কিছু উপহার দিতে পারছেন না বেল। এদিকে ‘স্পোর্টস ওয়্যার’ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাসের সঙ্গেও তার চুক্তি শেষ হতে চলেছে বছরখানেকের মধ্যে। যে কারণে এখন সপ্তাহ প্রতি ৫,০০,০০০ ইউরো (৫,০৫,৮০,৫৭৮.৮০ টাকা) আয় করা বেল হয়তো অদূর ভবিষ্যতে শীর্ষ ১০ বেতনের তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন।


৪। আতোঁয়ান গ্রিয়েজম্যান (বার্সালোনা)


অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ থেকে ফরাসি এই তারকার ক্যাম্প ন্যু ক্যাম্পে আগমন ছিলো ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে পঞ্চম খরুচে দলবদলের রেকর্ড। লিওনেল মেসির বিদায়ের পর গ্রিয়েজম্যানরাই এখন বার্সার কাছে ‘যক্ষের ধনে’ পরিণত হয়েছেন। বর্তমানে সেখানে ৫,৭৫,০০০ ইউরো (৫,৮১,৬৭,৬৬৫.৬২ টাকা) প্রতি সপ্তাহান্তে পেলেও, বার্সার আর্থিক সমস্যার কারণে তিনি চাইলে নির্ধারিত সময়ের আগেই ক্লাব ছেড়ে দিতে পারবেন।


৩। লুইস সুয়ারেজ (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ)


গ্রিয়েজম্যানের বদলির মাত্র একবছরের মাথায় লুইস সুয়ারেজকে খুবই অল্প দামে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল বার্সা। ৩৪ বছর বয়সী এই তারকা অবশ্য নতুন দলের হয়ে খেলা প্রথম মৌসুমেই ২১টি গোল করে লা লিগা শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন। ক্যারিয়ারের প্রায় শেষ দিকে চলে আসা এই তারকারও বর্তমান আয় ৫,৭৫,০০০ ইউরো বা ৫,৮১,৬৭,৬৬৫.৬২ টাকা।


২। নেইমার জুনিয়র (প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন)


এই তালিকার প্রথম তিনজনকে চিনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টকর। যাদের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের পোস্টার বয় নেইমার জুনিয়র। ২০১৭ সালে ২০০ মিলিয়ন ইউরোর রেকর্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে বার্সা থেকে পিএসজিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। আরব ধনকুবের দলটি বোনাস ছাড়াই বর্তমানে বছরে ৩০ মিলিয়ন ইউরোর মতো অর্থ ঢালছে নেইমারের পিছনে। সপ্তাহ প্রতি যেটি ৬,০৬,০০০ ইউরো বা ৬,১৩,০৩,৬৬১.৫১ টাকা।


১। লিওনেল মেসি (প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন)


আর্জেন্টাইন প্রতিভাবান ফুটবলার লিওনেল মেসিকে প্রায়শই সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্পেনের বার্সালোনা শহরের আলো-বাতাসে বেড়ে ওঠা এই স্ট্রাইকারকে ‘সাবেক বার্সা তারকা’ বলতে এখনো অনেকের মনে ‘খিঁচ খিঁচ’ করে। চলতি মৌসুমে নিজের বেতন অনেকটাই কমিয়ে সপ্তাহ প্রতি ১.১ মিলিয়ন ইউরোতে চুক্তি নবায়নের সিদ্ধান্ত নেন মেসি। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে স্প্যানিশ ক্লাবটি না চাইতেও তাকে ছাড়তে বাধ্য হয়। পরে নাসের আল খেলাইফির পিএসজি তাকে ৯,৬০,০০০ ইউরো বা ৯,৭১,১৪,৭১১.৩০ টাকা প্রতি সপ্তাহান্তে প্রদান করার আশ্বাসে তাকে দলে ভিড়িয়ে নেয়। বর্তমানে মেসির বার্ষিক আয় ৫০ মিলিয়ন ইউরো, যেখান থেকে ২৫ মিলিয়ন তাকে কর দিতে হয়। অবশ্য পেপসি এবং অ্যাডিডাস থেকে তিনি আরও ২৫ মিলিয়ন ইউরো আয় করেন।


সূত্রঃ স্পোর্টসজোন২৪