১৮ বছর বয়সে ত্বকের যত্ন এবং ২৫ বছর বয়সের ত্বকের যত্ন কখনোই এক হয় না। আবার ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে থাকে ৩০ বছর বয়সে পা দিলেই। তাই বয়ঃসন্ধিকালের ব্রণ সারানোর পদ্ধতি কখনোই বেশি বয়সে ত্বকের বলিরেখা সারানোর পদ্ধতি হতে পারে না। সুতরাং আসুন জেনে নেওয়া যাক কোন বয়সে কিভাবে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ত্বকের যত্ন নিবেন।
১. আঠারো-বিশ বছর বয়সে
এই বয়সে সাধারণত অ্যাকনে বা ব্রণের সমস্যা হয়ে থাকে। আসলে এই সময় শরীরে হরমোনের উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন ঘটে। আর তাই ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত হয়ে ওঠে।
কিন্তু কীভাবে এই অ্যাকনে বা ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়? এ ক্ষেত্রে ত্বকের যত্নে গ্রিন টি একটি অত্যন্ত উপকারী উপাদান। গ্রিন টি-তে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপস্থিত থাকায় এটি ব্রণের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও ত্বকে তেল জমতে বাধা দেয়। এমনকি ব্রণ সেরে যাওয়ার পর সেই জায়গায় কোনও রকম দাগ থাকলে তাও দূর করে দেয় গ্রিন টি।
এখন প্রশ্ন, কীভাবে ব্যবহার করবেন গ্রিন টি?
উপাদান :
১টি গ্রিন টি ব্যাগ, ১ কাপ গরম পানি
পদ্ধতি :
গ্রিন টির ব্যাগ এক কাপ গরম পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর গ্রিন টির ব্যাগ কাপ থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে এবং ঠাণ্ডা করতে হবে পানিটা। এবার তুলোর মাধ্যমে মুখে লাগাতে হবে এটি। এই মিশ্রণটি মুখে স্প্রেও করতে পারেন।
২. বিশ-পঁচিশ বছর বয়স
এই বয়সে আমরা সবাই কম বেশী চাকরি করতে শুরু করি। তার ফলে, বাস, ট্রেনে যাতায়াত করতেই হয়। জীবনে অনেক রকম পরিবর্তন আসে। আর তার প্রভাব পড়তে শুরু করে আমাদের ত্বকের ওপর। এই সময় ব্রণের সমস্যা মাঝে মাঝে দেখা যায়। একই সঙ্গে দেখা যায় কালো ছোপ। ব্ল্যাকহেডের মতো নতুন সমস্যাও এই বয়সে দেখা যায়। আর এসবের মূলে রয়েছে রোদে বের হওয়া। তবে এই ধরণের সমস্যাও খুব সহজে ঘরে বসেই সমাধান করা যায়।
লেবু, মধু, হলুদ দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক :
লেবুর মধ্যে থাকে ভিটামিন সি, যা আপনার ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। আর মধু ত্বকে প্রাকৃতিক ব্লিচের কাজ করে এবং হলুদ, ত্বককে জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে।
উপাদান :
১ টি লেবু, ২ চামচ হলুদ গুঁড়ো, ১ টেবিল চামচ মধু
পদ্ধতি :
সব উপাদান একসঙ্গে একটি বাটিতে মিশিয়ে পেস্ট বানাতে হবে। এবার মুখে এটি মেখে ১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন।
সময় হয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে অন্তত তিনবার এটি ব্যবহার করতে হবে।
২০-২৫ বছর বয়সে আমাদের ত্বকে অনেক রকম পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন, এই সময় ধীরে ধীরে বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করে। বিশেষত চোখের পাশে কালো ছোপ পড়তে দেখা যায়। এইসব ক্ষেত্রেও ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন করলে খুব ভাল ফল পাওয়া যায়।
অলিভ ওয়েল এবং ডিমের সাদা অংশ :
অলিভ ওয়েলে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা ত্বককে কুঁচকে যেতে দেয় না। অন্যদিকে ডিমের সাদা অংশ ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে।
উপাদান :
অলিভ তেল- ১ টেবিল চামচ, একটি ডিমের সাদা অংশ
পদ্ধতি :
একটি বাটিতে ডিমের সাদা অংশ এবং অলিভ তেল ভালো করে মেশাতে হবে। এবার মিশ্রণটি মুখে মেখে নিন। ১৫ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুইবার এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
৩. বয়স তিরিশের এর কোঠায় গেলে ত্বকের যত্ন
তিরিশের গণ্ডিতে পৌঁছালেই আমাদের ত্বকে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই সময় প্রতিদিন ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু যত্ন নিতে হয়। যাতে ত্বক থেকে মৃত কোষ দূর হয়ে যেতে পারে এবং ত্বক ভালো থাকে। এছাড়াও ক্রিমের মাধ্যমে ত্বককে সব সময় আদ্র রাখাটাও খুব দরকার। এর ফলে সহজে ত্বকে বলিরেখা দেখা যাবে না। আর যদি ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন তাহলে তো ত্বক থাকবে একেবারে তরতাজা এবং প্রাণোচ্ছ্বল। এই বয়সের ত্বকের সমস্যাগুলির জন্য মধু, ব্রাউন সুগার এবং জাম ব্যবহার করা সবথেকে ভাল। কারণ এগুলির ব্যবহারে ত্বক নতুন জীবন লাভ করে।
মধু, ব্রাউন সুগার এবং জাম :
উপাদান :
১/২ কাপ তাজা জাম, ২ টেবিল চামচ মধু, ২ টেবিল চামচ ব্রাউন সুগার
পদ্ধতি :
সব উপাদান একসঙ্গে ব্লেন্ডারে দিয়ে বেঁটে নিতে হবে। মিশ্রণটি মুখে মেখে ১০ মিনিটের জন্য রাখতে হবে। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি সপ্তাহে একদিন করে করতে হবে।
৪. চল্লিশ এর কোঠায় ত্বকের দেখাশোনা
৪০ বছর বয়সে আমাদের ত্বকে বার্ধক্য যেন একেবারে চেপে বসে। ফলে ত্বক কুঁচকে যাওয়ার সমস্যা আরও বেড়ে যায়। এসময় ত্বকে কোলাজেনের উৎপাদন কমে যায় অনেকটাই।
ফলে ত্বক শুষ্ক এবং বলিরেখায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই কারণেই এই সময় ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হয়। যাতে প্রয়োজনীয় কোলাজেন তৈরি হতে পারে। তবে এই সময় ত্বকের যত্ন করাটাও খুব জরুরি। অ্যালোভেরা এবং কাঠ বাদাম হল এমন দুটি উপাদান, যা ত্বককে সুস্থ রাখতে এবং বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে।
অ্যালোভেরা এবং কাঠ বাদাম প্যাক :
কাঠ বাদামে প্রচুর পরিমাণে তেল মজুত থাকার ফলে এর ব্যবহারে ত্বকে বয়সের চাপ সহজে পড়ে না। আর অ্যালোভেরা ত্বকের বলিরেখা কমিয়ে ত্বককে আরও নরম এবং মজবুত করে তোলে।
উপাদান :
৪-৫ টি কাঠ বাদাম সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। অ্যালোভেরার ১ টি তাজা পাতা।
পদ্ধতি :
কাঠবাদামগুলো ভাল করে বেঁটে নিন। এরপর অ্যালোভেরা পাতাটা কেটে ভেতর থেকে জেলটা বের করে নিতে হবে।
অ্যালোভেরা জেল এবং কাঠ বাদাম মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এরপর পেস্টটা মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে ২০ মিনিট। সময় শেষ হয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখটা ধুয়ে নিতে হবে।
সূত্র : বোল্ড স্কাই