‘আর হে নবী! আমার বান্দা যদি তোমার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তাহলে তাদেরকে বলে দাও, আমি তাদের কাছেই আছি। যে আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি এবং জবাব দেই, কাজেই তাদের আমার আহ্বানে সাড়া দেয়া এবং আমার ওপর ঈমান আনা উচিত, এ কথা তুমি তাদের শুনিয়ে দাও, হয়তো সত্য-সরল পথের সন্ধান পাবে।’(সূরা বাকারা : ১৮৬)
‘পৃথিবী ও আকাশমণ্ডলে যা-ই আছে সবাই তাঁর কাছে নিজের প্রয়োজন প্রার্থনা করছে। প্রতি মুহূর্তে তিনি নতুন নতুন কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত।’(সূরা আর রাহমান : ২৯)
মহাবিশ্বের এ কর্মক্ষেত্রে প্রতি মুহূর্তে তাঁরই কর্মতৎপরতার এক সীমাহীন ধারাবাহিকতা চলছে। কাউকে তিনি মারছেন আবার কাউকে জীবন দান করছেন। কারো উত্থান ঘটাচ্ছেন আবার কারো পতন ঘটাচ্ছেন, কাউকে আরোগ্য দান করছেন আবার কাউকে রোগাক্রান্ত করেছেন, কাউকে ডুবন্ত অবস্থা থেকে রক্ষা করেছেন আবার সাঁতার কেটে চলা কাউকে নিমজ্জিত করেছেন। সীমাসংখ্যাহীন সৃষ্টিকে নানাভাবে রিজিক দান করেছেন।
অসংখ্য বস্তুকে নতুন নতুন স্টাইল, আকার-আকৃতি ও গুণ বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর পৃথিবী কখনো এক অবস্থায় অপরিবর্তিত থাকে না। তার পরিবেশ ও অবস্থা প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হতে থাকে এবং তার স্রষ্টা তাকে প্রতিবারই একটি নতুন রূপে সজ্জিত করেন, যা আগের সব আকার-আকৃতি থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে।
যদিও আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে আমাদের বাস্তব চু দিয়ে দেখতে পাই না এবং ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভবও করতে পারি না, তথাপি তাঁকে দূরে মনে করা ঠিক নয়। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বান্দার অতি কাছেই অবস্থান করেন। প্রত্যেক মানুষ ইচ্ছা করলে সব সময় তার কাছে আর্জি পেশ করতে পারে।
এতে তিনি সব কিছু শুনেন। কারণ তিনি সামিউম বাছির বা শ্রবণকারী ও মহাদ্রষ্টা। এমনকি মনে মনে যা আবেদন করা হয় তাও তিনি শুনতে পান। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ মনের গোপন কথাও জানেন।’(সূরা ইমরান : ১১৯)
শুধু শুনতে পান না বরং সে সম্পর্কে তিনি সিদ্ধান্তও ঘোষণা করেন। মানুষ অজ্ঞতা ও মূর্খতার কারণে যেসব অলীক, কাল্পনিক ও অম সত্তাদের উপাস্য ও প্রভু গণ্য করে তাদের কাছে দৌড়ে যায়, অথচ তারা তার কোনো আবেদন-নিবেদন শুনতে পায় না এবং আবেদনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতাও তাদের নেই। আল্লাহ গভীর ও প্রখর দৃষ্টিসম্পন্ন।
তিনি তাঁর বান্দাদের কার্যাবলী, সঙ্কল্প ইচ্ছা পুরোপুরি ভালোভাবেই জানেন। কারণ তিনি বাছিরুম বিল ইবাদ। তিনি লাতিফ বা সূক্ষ্মদর্শী। আল্লাহ তায়ালা বলেন, (আর লোকমান বলেছিল)‘হে পুত্র! কোনো জিনিস যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় এবং তা লুকিয়ে থাকে পাথরের মধ্যে, আকাশে বা পৃথিবীতে কোথাও, তাহলে আল্লাহ তা বের করে নিয়ে আসবেন। তিনি সূক্ষ্মদর্শী এবং সবকিছু জানেন।’ (সূরা লুকমান ১৬)
‘দৃষ্টিশক্তি তাঁকে দেখতে অম কিন্তু তিনি দৃষ্টিকে আয়ত্ত করে নেন। তিনি সূক্ষ্মদর্শী ও সর্বজ্ঞ।’ (আন’আম : ১০৩)
আল্লাহর জ্ঞান ও তাঁর পাকড়াওয়ের বাইরে কেউ যেতে পারে না।
আল্লাহ তায়ালা বান্দাহর এত কাছাকাছি অবস্থান করেন যে, কোনো প্রকার মাধ্যম ও সুপারিশ ছাড়াই বান্দাহ সরাসরি সর্বত্র ও সবসময় তাঁর কাছে আবেদন-নিবেদন পেশ করতে পারে।
আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র ওহাব বা প্রকৃতদাতা। আমাদের সমাজব্যবস্থায় কিছু কিছু বিষয় মনকে দারুণভাবে পীড়া দেয়।
এর মধ্যে একটি হলো, কিছু কিছু মূর্খ মানুষ সেই প্রকৃত দাতা আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি মানুষের দরবারে সন্তান কামনা করে থাকে। খুব ভালো করে মনে রাখা প্রয়োজন এ ধরনের আচরণ সুস্পষ্ট শিরকের অন্তর্ভুক্ত। সন্তান দেয়ার মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। হজরত ইবরাহিম (আ:) শেষ বয়সে এসে আল্লাহর কাছে বলছেন, ‘আমি আমার রবের দিকে যাচ্ছি, তিনিই আমাকে পথ দেখাবেন। হে পরোয়ারদিগার!
আমাকে একটি সৎকর্মশীল পুত্রসন্তান দাও। (এ দোয়ার জবাবে) আমি তাকে একটি ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম।’ (সাফফাত : ১০০-১০১)
কাজেই আমাদের প্রত্যেককে অম ও বানোয়াট খোদার দ্বারে দ্বারে মাথা ঠুকে মরার অজ্ঞতা ও মূর্খতার বেড়াজাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে হবে। একজন ব্যক্তি দুনিয়ায় জীবনযাপনের জন্য প্রত্য বা পরোভাবে, বস্তুগত বা অবস্তুগত যত কিছুর অভাব বা প্রয়োজন হয়, সবগুলোরই প্রকৃত দাতা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা।
আল্লাহ তায়ালাই প্রকৃত ও উত্তম রিজিকদাতা। পৃথিবীতে রিজিকদানের পরো মাধ্যম যে বা যাই হোক না কেন তাদের সবার চেয়ে উত্তম রিজিকদাতা হলেন আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যে সময় তারা ব্যবসায় ও খেল তামাশার উপকরণ দেখল তখন তারা তোমাকে দাঁড়ান অবস্থায় রেখে সে দিকে দৌড়ে গেল। তাদের বলো, আল্লাহর কাছে যা আছে তা খেল তামাশা ও ব্যবসায়ের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ (সূরা জুময়া : ১১)
কুরআন মজিদের বহুসংখ্যক স্থানে এ ধরনের কথা বলা হয়েছে। কোথাও আল্লাহ তায়ালাকে আহসানুল খালিকিন ‘সর্বোত্তম সৃষ্টিকর্তা’, কোথাও খায়রুল গাফিরিন ‘সর্বোত্তম মাকারী’, কোথাও খায়রুল হাকিমিন ‘সর্বোত্তম বিচারক’