প্রশ্ন : মেয়েদের বোরখার মুখ খুলে রাখা যাবে কি?
উত্তর : এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে দ্বিমত আছে। একদল ওলামায়ে কেরাম বলেছেন যে যদি মেয়েরা মুখ খোলা রাখে, তাহলে সেটি নাজায়েজ নয়। বাধ্যতামূলক নয় যে মুখ ঢেকে রাখতে হবে, অর্থাৎ খোলা রাখা জায়েজ।
আবার আরেক দল ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, না, মুখ ঢেকে রাখাটা ওয়াজিব, খোলা রাখাটা জায়েজ নয়। এর পক্ষে-বিপক্ষে দুই পক্ষেই বক্তব্য আছে এবং দুই পক্ষে দলিলও আছে। বিভিন্ন ধরনের দলিল দেওয়া রয়েছে।
কিন্তু একটি বিষয়ে দুই পক্ষের ওলামায়ে কেরাম ঐকমত্যে পৌঁছেছেন, সেটা হচ্ছে এই, যদি এমন হয় যে মুখ খোলা রাখার কারণে কোনো ধরনের ফিতনার আশঙ্কা থাকতে পারে, কোনো ধরনের ফিতনা হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সে ক্ষেত্রে মুখ ঢেকে রাখাটা ওয়াজিব। কারণ, মুখ খোলা রাখার জন্য ফিতনা যদি হয়, তাহলে এই ফিতনার দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে তাঁকেই, যিনি মুখ খোলা রেখেছেন।
নারীদের মুখমণ্ডলকেই মূলত বলা যেতে পারে সৌন্দর্যের মূল বিষয় অথবা এর মাধ্যমেই সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ হয়ে থাকে। অথচ কোরআনে কারিমের আয়াতগুলো যদি আমরা দেখি, তাহলে আল্লাহ সুবানাহুতায়ালা বলেছেন, ‘যখন তোমরা তাদের কাছে কোনো কিছু চাইবে, তখন তোমরা পর্দার আড়াল থেকো তাদের কাছ থেকে, যেকোনো ধরনের অন্তরালে থেকে তাদের কাছে চাইবে।’
এই আয়াত থেকে বোঝা যাচ্ছে, সৌন্দর্য পরিপূর্ণভাবে ঢেকে রাখাই হচ্ছে ইসলামের বিধান এবং সে কারণেই দেখা গেছে যে ফিতনা থেকে যেন নারী-পুরুষ উভয়ই মুক্তি পায়, এ জন্য আল্লাহ সুবানাহুতায়ালা কোরআনে কারিমে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘মুমিন পুরুষদের আপনি বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে, সংযত রাখে এবং তারা যেন তাদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে।’ (সূরা-নূর, আয়াত-৩০, ৩১ ও ৩২)।
এখানে পুরুষদের জন্য নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। সেটা হচ্ছে যে, পুরুষগণ তাঁদের দৃষ্টিকে সংযত রাখতে হবে। কারণ, দৃষ্টি সংযত না রাখলে সেখানে অনিচ্ছাকৃত ফিতনা হতে পারে।
দ্বিতীয় হচ্ছে, ‘আর মুসলিম নারীদের আপনি বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে।’ নারীদের জন্যও এখানে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁরাও তাঁদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে। তাহলে বোঝা গেল যে শুধু সৌন্দর্য ঢেকে রাখাই যথেষ্ট নয়, এর সঙ্গে আরো যেটি নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে সেটি হলো, দৃষ্টিকেও সংযত রাখতে হবে। সুতরাং এখানে বোঝারও বিষয় রয়েছে।
এখানে সৌন্দর্য ঢেকে তো রাখবেই, উপরন্তু পুরুষ ও নারী উভয়ই নিজেদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে, যাতে করে নিজেদের ফিতনা থেকে মুক্ত রাখতে পারে। কোনো কারণে যেন ফিতনার মধ্যে পতিত না হয়।
তাই এ ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ বক্তব্য যেটি, আহলুত তাহকিক, মাহকি, ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, সেটি হলো এই, মুখ ঢেকে রাখাটাই হচ্ছে বিধান এবং এটাই হচ্ছে শক্তিশালী বক্তব্য। কিন্তু যেহেতু এখানে দুটি অভিমত রয়েছে, কেউ যদি মনে করেন আমি দ্বিতীয় মতটি গ্রহণ করব, তিনি গ্রহণ করতে পারেন।
তবে গ্রহণ করতে হলে তাঁকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, কোনোভাবেই যাতে তাঁর মাধ্যমে ফিতনা না হয়। কারণ, যদি কোনো কারণে ফিতনা হয়, তাহলে কিন্তু তিনি গুনাহর মধ্যে লিপ্ত হবেন, এতেও কোনো সন্দেহ নেই।
সূত্রঃ আপনার জিঙ্গাসা, এনটিভি অনলাইন