প্রশ্ন : জানাজায় শরিক হওয়ার জন্য মাইকিং করা কতটুকু জায়েজ?
উত্তর : জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য মাইকিং করার বিধানটি মূলত আলেমদের মধ্যে মতবিরোধপূর্ণ। একদল ওলামায়ে কেরাম বলেছেন যে, মৃত ব্যক্তির সংবাদ দেওয়ার ব্যাপারে রাসুল (সা.) যে বিষয়টি নিষেধ করেছেন সেটি হলো, ‘মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করতে না করা’। ফলে তাঁরা মনে করে থাকেন যে, এর মধ্যে মৃত ব্যক্তির জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য বলা, এ কাজটি শুদ্ধ নয়।
এ হাদিস থেকে আরেকদল ওলামায়ে কেরাম যেটি বুঝেছেন বা যে বিশ্লেষণটি গ্রহণ করেছেন সেটি হলো এই যে, নবী (সা.) মূলত মৃত ব্যক্তির সংবাদ প্রচার করতে নিষেধ করেছেন কারণ ‘নাঈ’ শব্দটি সেখানে উল্লেখ আছে। ‘নাঈ’ হচ্ছে মৃত্যুর সংবাদ দিয়ে লোকদের একত্রিত করা, কান্না করা, বিলাপ করার জন্য। এটিই মূলত ওই সময় প্রচলিত ছিল। এই প্রচলনটি জাহিলি প্রচলন।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হাদিসের মধ্যে বলেছেন, ‘এটা জাহিলীয় আহ্বানগুলোর মধ্যে একটি’ (সহিহ বুখারী এবং মুসলিম)। তাই এই জাহিলীয় আহ্বান যাতে কোনোভাবেই মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে না হয়, এজন্য রাসুল (সা.) নিষেধ করেছেন।
কারণ যেসব হাদিসে এই নির্দেশনাগুলো রয়েছে সেগুলোর সাথে এ কথাও রয়েছে যে, ‘মৃত ব্যক্তিকে তাঁর কবরের মধ্যে শাস্তি দেওয়া হবে, তাঁর পরিবারের লোকজন যখন তাঁর ওপর বিলাপ করবে, তাঁর জন্য কান্না করবে’ (সহিহ বুখারী)।
মূলত এই কাজটি এই জন্যই নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু সালাতে অংশগ্রহণের জন্য অথবা শুধু মৃত্যুর খবরকে মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্যও মাইকিং হতে পারে।
মূলত দুইটা ধারণাই নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। দুদল ওলামায়ে কেরাম দুদিকে এই হাদিসের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যে জিনিসটি আমার কাছে স্পষ্ট মনে হচ্ছে সেটা হলো- দ্বিতীয় বক্তব্যটি খুবই কাছাকাছি। সেটা হলো, এই ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে কান্না করা, বিলাপ করা যেটি জাহিলীয় সমাজের লোকেরা করত, এটিই মূলত রাসুল (সা.) নিষেধ করেছেন। আর এটাকেই মূলত ‘নাঈ’ বলা হয়ে থাকে।
আর যদি শুধু জানাজার সালাতের জন্য মৃত্যুর সংবাদ দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে এ কাজটি নিষিদ্ধ হবে না। কারণ গ্রামে যদি একজন লোক মারা যায় আর সংবাদ না দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে মানুষ জানবে কীভাবে। হয় মাইকে নয়তো লোক পাঠিয়ে আপনি সংবাদটি দিবেন। আপনাক তো অবশ্যই সংবাদ দিতে হবে।
তাহলে এখানে বোঝা যাচ্ছে, যদি সংবাদ না দেওয়া হয় তাহলে মৃত্যু হয়েছে এটি মানুষ জানতে পারবে না এবং তাঁর জানাজায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। অথচ জানাজায় অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইমানদার ব্যক্তিদের হক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি একটি দলিল।
দ্বিতীয় দলিল হচ্ছে, রাসুল (সা.)-এর সময়ে একজন কালো দাসী মসজিদ পরিষ্কার করত। কোনো এক রাতে ওই দাসীর মৃত্যু হয়। উপস্থিত সাহাবীরা তখন তাঁর দাফনের ব্যবস্থা করলেন। নবী (সা.) সকালে যখন জানতে পারলেন যে দাসী মারা গেছেন তখন তিনি বললেন, ‘আমাকে কেন সংবাদ দিলে না?’।
এ হাদিস থেকে এটাও আমরা বুঝতে পারছি, মৃত্যুর খবরটা দেওয়ার গুরুত্ব এখানে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় এরপর রাসুল (সা.) দাসীর কবরে গিয়ে জানাজার সালাত আদায় করলেন। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে, জানাজার সালাতে অংশগ্রহণ করা ইমানদার ব্যক্তিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবাদ দেওয়ার বিষয়টিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই সংবাদটুকু মানুষ ব্যক্তিগত পর্যায়ে করবে। কিন্তু দেখা যায় যে মাইকের মধ্যে যেই সংবাদ দেওয়া নিষেধ করা হয়েছে সেটিই করা হয়ে থাকে। এই নোটিশ করা বৈধ নয় যেহেতু রাসুল (সা.) ‘নাঈ’-এর বিষয়টি এমনেই নিষেধ করেছেন।
উপরন্তু মসজিদের মাইকে ব্যক্তিগত কোনো সংবাদ প্রচার করা জায়েজ নয়। কারণ তাহলে মসজিদের মাইকে ব্যাপকভাবে প্রচারণা শুরু হবে। ফলশ্রুতিতে মসজিদের যে হক বা মর্যাদা রয়েছে তা ক্ষুণ্ণ হবে।
কিন্তু মৃত ব্যক্তির আপনজন যদি একান্ত ব্যক্তিগতভাবে মাইকিং করে মৃত্যুর খবর প্রচার করতে চায় তাহলে সেটি তাঁদের জন্য জায়েজ।
সূত্রঃ আপনার জিঙ্গাসা, এনটিভি অনলাইন