সদ্যবিবাহিত আমার একজন কাছের বন্ধু (পরিচিত ফেসবুকার তাই নাম প্রকাশ করছিনা) বিয়ের কিছুদিন পর তার বউকে নিয়ে আমার বাসায় বেড়াতে আসতে চাইলো।
বাসায় আমি ছাড়া আর কেউ নেই। তাকে বললাম আগামী শুক্রবারে আয় আমি বাসায় একা।
বউ নিয়ে আসবি ভালো খাতির যত্ন না করলে তোরই অসম্মান হবে।
আমি মসুর ডাল আর ডিম ভাজি ছাড়া আর কিছু ভালোভাবে বানাতে জানিনা।
কিন্ত সে নাছোড়বান্দা। আজই আসতে চায়... তেমন কোনো আহামরি আয়োজনের দরকার নেই। হোটেল থেকে খাবার এনে খাতির যত্ন করলেও সমস্যা নেই... জানালো সে।
তাছাড়া আমরা দেখা করার জন্য আসছি; খাওয়ার জন্য না।
বললাম ঠিকাছে... চলে আয়। বন্ধু তার নতুন বউ নিয়ে আসবে। আমি হোটেলের খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করবো তা হয়না। জলদি বাজারে গিয়ে সদাইপাতি কিনে নিয়ে এলাম।
বিরিয়ানী পাকানোর ইচ্ছে ছিলো কিন্ত আমি পারিনা। চিকন চালের সাদা ভাত রান্না করলাম। তরকারীর মধ্যে ছিলো চিকেন ফ্রাই, ফিশ ফ্রাই, আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, মসুর ডাল, সেদ্ধ ডিম আর সালাদ।
আয়োজনটা একটু বড় হয়ে গেছে দেখে আরেক বন্ধুকেও সস্ত্রীক দাওয়াত করলাম।
দুজনই ফোনে জানালো কিছুক্ষনের মধ্যেই এসে পৌঁছে যাবে।
এদিকে রান্নার কাজ প্রায় শেষ। শুধু মসুর ডাল বাকী রয়ে গেছে। পানির পরিমান বেশি হয়ে যাওয়ায় দেরী হচ্ছিলো।
কিছুক্ষন পর পর আমি চামচ দিয়ে নেড়ে দিচ্ছি আর অন্যান্য আইটেমগুলোর তদারকি করছি।
মনে মনে ভাবছি সবচেয়ে সহজ জিনিষটাতেই কষ্টটা বেশি হচ্ছে। ডাল অবশ্যই স্বাদ হওয়া চাই।
হঠাৎ কিচেনের ছাদ থেকে একটা টিকটিকি এসে পড়লো ডালের পাতিলে।
বাসায় তেলাপোলা টিকটিকি থাকার কথা না। প্রতি সপ্তাহেই ক্লীন করা হয়। আজ কোথা থেকে উদয় হলো দৈবক্রমে !
তাও আবার ডালের পাতিলেই !!
পাতিলে তাকিয়ে দেখি গলে গেছে। কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা। এদিকে অন্য তরকারীতে ঝোল নেই।
ডাল অবশ্যই দরকার। তাছাড়া আমি আগেই ' মসুর ডাল ভালো বানাতে জানি' বলে আত্মপ্রশংসা করে রেখেছি।
চামচ দিয়ে ভালোভাবে নাড়লাম কিছুক্ষন। টিকটিকি একদম মিক্স হয়ে গেছে ডালের সাথে।
ইতোমধ্যে তারা এসে পৌঁছে গেছে। খাবারও রেডি...
তারা নিজেরাই কিচেন থেকে সব টেবিলে এনে ঘরোয়াভাবে নিজেদের খাবার নিজেরাই পরিবেশন করছে। আমার কিছু করতে হচ্ছেনা। বারবার আড়চোখে লক্ষ্য করছি কে আগে ডাল নেয়...
সবার আগে নতুন বউই ডাল নিলো !
বাহ্ লৌকিক ভাইয়া... মসুর ডাল অনেক মজা হয়েছে !!
বললাম Thanks
এরপর সবাই ডালের প্রতি নজর দিলো। ডালের পাতিল প্রায় খালি। অন্য তরকারী বাদ দিয়ে শুধু ডালের প্রশংসা চলছে।
দ্বিতীয় বন্ধুর বউকে বললাম ভাবী ডাল কেমন হয়েছে?
অনেক অনেক মজার হয়েছে ভাইয়া... আপনার কাছে রান্না শিখতে হবে আমাদের।
ওহ... শুনে খুশি হলাম
আচ্ছা চাইলে টিফিন বক্সে করে নিয়ে যেতে পারেন।
শেষে যাওয়ার সময় ছোট দুইটা প্লাস্টিক কন্টেইনারে করে দুজনকে অবশিষ্ট মসুর ডাল দিয়ে দিলাম।
যাওয়ার সময় দাওয়াত দিয়ে গেছে আগামী সপ্তাহে যাতে তাদের বাসায় যাই। এবং সেখানেও তাদের মসুর ডাল রান্না করে খাওয়াতে হবে !!
বললাম ঠিক আছে চেষ্টা করবো।
বাউরে... মনে মনে ভাবি, সেখানে টিকটিকি পাবো কই
লেখা: অচিকীর্ষূ লৌকিক