দেশের হয়ে যে ১১ জন ক্রিকেটার খেলতে নামে ওরা কি জানে তাদের প্রত্যেকটা রানের পেছনের ইতিহাসগুলো??
রিকশাওয়ালা গফুর রাতে ৩ ঘন্টা এক্সট্রা রিকশা চালিয়েছে বাংলাদেশের খেলা জলিলের চায়ের দোকানে অথবা কোনো টিভি শোরুমের সামনে বসে দেখবে বলে...
CNG ওয়ালা তো ওয়াদাই করেছে, বাংলাদেশের খেলার দিন সে মিটারে ভাড়া মারবে.....
রেল লাইনের কলোনির পেছনের ছেলেটা......যে একটা ছেড়া গেঞ্জি পরে সারাদিন ঘুরে বেড়ায় সে "মানত" করেছে...... বাংলাদেশ জিতলে সে ২ টাকা মসজিদ এ দিয়ে দিবে.....
৭০ বছরের বৃদ্ধ সকাল থেকেই রেডিওটা নিয়ে বসে আছেন,.....জাফরউল্লাহ শারাফাত এর গলায় একটু পর "ডাউন দ্যা উইকেটে এসে বিশাল এক ছয় মারলেন সাকিব" এই ধারাভাষ্যটা শুনবেন বলে....
শুভ্র, খেলা দেখার সময় একদিন পানি খাইতে খাইতে মুশফিক আউট হয়েছিল....তারপর?... জিন্দেগীতে কখনো খেলার সময় সে পানি ভেতরে ঢুকায় না.....
অয়ন, সাকিবের ৮০ পার হওয়ার পর কখনোই বাথরুমে যায় না... ভেতরে নিম্নচাপ, সুনামি যাই হোক না কেনো... দরকার হলে ফ্লোর ভাসে যাবে তাও সে বাথরুমে যাবে না.....
চায়ের দোকানদার জলিল আজকে সকালে জলদি দোকানে এসেছে যাতে মাশরাফির ওভারের প্রথম বলটা মিস না হয়.....
জলিল এর দোকানে যে ছেলেটা কাজ করে সেই ছেলেটা গতকাল রাতে ওভারটাইম করেছে......তামিমের সেই পুল করা শটটা দেখবে বলে........
ছেলেটা তার প্রেমিকার সাথে খেলার দিন কথা বলে না....
মেয়েটাও ওইদিন ব্যালকনিতে যায় না... রণবীর কাপুর ওইদিন ওই রাস্তা দিয়ে গেলেও সে ওইদিন ব্যালকনিতে যাবে না, কারণ একদিন একটুর জন্যে ব্যলকনিতে গিয়েছিল সে....ফিরে এসে দেখে মমিনুল আর নাসির আউট.......!
চিন্তা করা যায়?....
.....সাকিবকে "বান্দির পুত" বলায় যে ছেলেটা মহল্লার ঝাঁকড়া চুলের ছেলেটার চোয়াল ভেঙে দিয়েছিল সেও দরজায় খিল লাগিয়ে খেলা শুরুর অপেক্ষা করছে,.... সে একাই খেলা না দেখলে বাংলাদেশ আবার গো-হারা হারে কিনা....!
......ইংল্যান্ডের খেলার দিন খেলা দেখতে দেখতে একজন তার বন্ধুকে ফোনে (খা...) বলে গালি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে দেখে রুবেল একজনের মিডল স্টিক (!) উড়ায় দিছে.... তারপর বাকিটা ইতিহাস.....ওই গালিটা খেলার দিন একটা "ট্রেডমার্ক" হিসেবে ইউস হয়......
এসবকে কি বলা যায়?
আবেগ?? অন্ধ বিশ্বাস? নাকি বোকামো?
নাকি শুধুই ভালোবাসা? নিখুত ভালোবাসা?
যা ইচ্ছা তাই বলতে পারেন.... তবে কোনো একদিন.... কোনো একদিন যেদিন বাংলাদেশ ওই সোনালী কাপটা উঁচিয়ে ধরে বাঘের একটা গর্জন দিবে সেদিন এটাকে যদি ন্যাকামি বলছেন....
......তো এদেশের ১৬ কোটি ক্রিকেট পাগল মানুষ আপনাকে ছেড়ে কথা বলবে না.....
ওগুলো ন্যাকামো না, ওগুলোকে স্বর্গীয় ভালোবাসা আর আবেগ বলে যা বুকের বামপাশের বিন্দু বিন্দু রক্ত চুইয়ে চুইয়ে তৈরী হয়........
আমরা জিতবো....
বিশ্বকাপ জিতবো...
সারা দুনিয়া অবাক তাকিয়ে থাকবে, আর আমরা বিশ্বজয়ের হাসি দিব.... সেই হাসি শহরে, গ্রামে, তল্লাটে তল্লাটে ছড়িয়ে পড়বে.....থেমে থাকবে না......
দেইদিন খুব বেশি দূরে নয়.....
লেখা : নীল সালু