প্রথমে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ঝড়ো ব্যাটিং এ আশায় বুক বেঁধে ছিলেন টাইগার ভক্তরা । তবে তিনি যখন ফিরে যান লক্ষ্য তখনও বহু দূর। সেখান থেকে ম্যাচ জয়ের আশা ছিল টাইগারদের জন্য বিলাসিতা । ঠিক তখনই বাংলাদেশকে নতুন করে আশা দেখান জাকের আলী। ছক্কা-চারের ফুলঝুরি ছুটিয়ে জয় প্রায় এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ ওভারে এসে আউট হয়ে গেলে শেষ পর্যন্ত হার মানতেই হয় টাইগারদের।
সোমবার (৪ মার্চ) টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে সফরকারীদের ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানায় স্বাগতিকরা। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশকে ২০৭ রানের লক্ষ্য দেয় শ্রীলঙ্কা। জবাব দিতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ২০৩ রান তুলতে পারে শান্ত-লিটনরা। এতে ৩ রানের জয় পায় লঙ্কানরা।
ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই আভিস্কা ফার্নান্দোকে প্যাভিলিয়নে ফেরান শরিফুল ইসলাম। তার অফ সাইডের বল কাভার অঞ্চলে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের তালুবন্দি হন ৪ রান করা লঙ্কান এই ওপেনার।
পঞ্চম ওভারে বাংলাদেশকে আবারও ব্রেক’থ্রু এনে দেন তাসকিন আহমেদ। তার অফসাইডের বাইরে করা বলটিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন কামিন্দু মেন্ডিস। তার বলে আসে ১৪ বলে ১৯ রানের ইনিংস। ৩৭ রানে দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে লঙ্কানরা। তবে ৩য় উইকেট জুটিতে কুশল মেন্ডিস এবং সাদিরা সামাবিক্রমা বিপর্যয় সামাল দেন।
এই জুটি গড়ার পথে হাফ সেঞ্চুরি করেন মেন্ডিস। তাদের ৯৬ রানের জুটি ভাঙেন রিশাদ হোসেন। তাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নিয়ন্ত্রিত ক্যাচে মাঠ ছাড়েন মেন্ডিস। ৩৬ বলে ছয়টি চার ও তিনটি ছক্কার সাহায্যে ৫৯ রান করেন এই ওপেনার। এরপর সাদিরা সামারাবিক্রমা এবং ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কার ব্যাটে এগিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের বোলারদের তুলোধুনো করে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সামাবিক্রমাও। এই জুটিতে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত ৪৮ বলে ৬১ রানে অপরাজিত ছিলেন সামারাবিক্রমা। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটাই তার সর্বোচ্চ রান। আরেকপ্রান্তে ২১ বলে ছয়টি ছক্কায় ৪৪ রানে অপরাজিত ছিলেন আসালাঙ্কা। বাংলাদেশের হয়ে ১টি করে উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ ও রিশাদ হোসাইন।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের করা প্রথম ওভারেই ফিরে যান লিটন দাস। ইনিংসের তৃতীয় বলে উইকেটের পেছনে কুশল মেন্ডিসকে ক্যাচ দিয়ে শূন্য রানেই ফেরেন এই ওপেনার। চতুর্থ ওভারে ফিরে যান সৌম্য সরকারও। বিনুরা ফার্নান্দোর করা বলে মিড অফে উড়িয়ে মারতে গিয়ে চারিথ আসালাঙ্কার তালুবন্দি হন সৌম্য। ফেরার আগে করেন ১১ বলে ১২ রান। ৩০ রানের মধ্যে নিজেদের তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ছক্কা মেরে ইনিংস শুরু করা তাওহিদ হৃদয়ও ম্যাথিউসের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। তার ব্যাটে আসে ৫ বলে ৮ রান।
নবম ওভারে ফিরে যান নাজমুল হোসেন শান্তও। বাংলাদেশের অধিনায়ক ২২ বলে ২০ রান করে মাথিশা পাথিরানার বলে ফিরে যান। স্কয়ার লেগে শান্তর ক্যাচটিও ধরেন ম্যাথিউস। বাংলাদেশের রান তাড়ার মিশনটি ভালোভাবে শুরু হয় ৬৮ রানে চার উইকেট যাওয়ার পর। তাণ্ডবের শুরুটা করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। জাকের আলী অনিকের সঙ্গে জুটি গড়েন ৪৭ রানের। এই জুটিতে মাত্র ২৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন মাহমুদউল্লাহ। যদিও আগ্রাসী ভঙ্গিমায় খেলতে খেলতে মাহিশ থিকশানার বলে ফিরে যান তিনি।
৩১ বলে দু’টি চার ও চারটি ছক্কায় ৫৪ আসে তার ব্যাটে। লং অনে ক্যাচ দিয়ে মাহমুদউল্লাহ ফেরার পর বাংলাদেশের হাল ধরেন জাকের। শেখ মেহেদীর সঙ্গে চটজলদি ৬৫ রানের জুটি গড়েন তিনি। এই জুটিতে অবশ্য জাকেরের অবদানই বেশি। তবে দলীয় ১৮০ রানে ফিরে যাওয়ার আগে মেহেদীর ১১ বলে ১৬ রানের ইনিংসটিও বাংলাদেশকে প্রেরণা দেয়। শেষ ওভারে ফিরে যাওয়ার আগে ৩৪ বলে চারটি চার ও ছয়টি ছক্কায় ৬৮ রান করেন জাকের। শেষ বলে জয়ের জন্য ৫ রান প্রয়োজন হলে মাত্র ১ রান নিতে সমর্থ্য হন স্ট্রাইকে থাকা তাসকিন। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ২০৩ রানে আটকে যায় টাইগাররা।