এশিয়া কাপ নিয়ে ত্রিমুখী দ্বন্দে পিসিবি-এসএলসি-এসিসি

ক্রিকেট দুনিয়া February 5, 2024 1,325
এশিয়া কাপ নিয়ে ত্রিমুখী দ্বন্দে পিসিবি-এসএলসি-এসিসি

হাইব্রিড মডেলে অনুষ্ঠিত হয় এশিয়া কাপের ১৬তম আসর। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা দুই দেশ মিলিয়ে এশিয়া কাপ আয়োজন করতে গিয়ে ভারতীয় মুদ্রায় ৩০ কোটি রুপির মতো বেশি খরচ হয়েছিল। এই খরচের একংশের দায় ভার নিতে রাজি নয় কোনও দেশই।


বিমান, হোটেল, মাঠ, স্থানীয় পরিবহন ভাড়া-সহ কিছু ক্ষেত্রে হওয়া বাড়তি খরচ নিয়ে ঘোলাটে পরিস্থিতির শিকার হয়ে এশিয়ার ক্রিকেটে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এবং শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের (এসএলসি) মধ্যকার উদ্ভুত এই সমস্যার সমাধান নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)-কেও।


গত সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় এসএলসি সভাপতি শামি সিলভা দাবি করেন, এশিয়া কাপের হোটেল বিল এখনো পরিশোধ করেনি পিসিবি। জবাবে এসিসি সভাপতি জয় শাহ বিষয়টি নিয়ে শামি সিলভাকে সরাসরি পিসিবির সঙ্গে আলোচনার নির্দেশ দিয়েছেন।


এশিয়া কাপের আয়োজক ছিল পাকিস্তান। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের পাকিস্তানে খেলতে যেতে দিতে রাজি হয়নি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। ভারতের আপত্তির কারণে প্রতিযোগিতা হয়েছিল হাইব্রিড মডেলে। অধিকাংশ ম্যাচ আয়োজনের দায়িত্ব নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তাতে মাত্রা ছাড়ায় খরচের পরিমাণ। এই অতিরিক্ত খরচ নিয়েই সংকটের উৎপত্তি।


পিসিবির তৎকালীন চেয়ারম্যান জাকা আশরাফ প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচ লাহোর থেকে মুলতানে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সে কারণেও বাড়তি কিছু খরচ হয়েছিল। তবু পাকিস্তানের কর্তারা বাড়তি খরচের দায়িত্ব নিতে নারাজ। পিসিবির যুক্তি, তারা পুরো প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে রাজি ছিলেন। শ্রীলঙ্কায় ম্যাচ সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এসিসি। তাদের কোনও বক্তব্যকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এসিসির জন্যই প্রতিযোগিতা আয়োজনের খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তাই এই বাড়তি খরচ তারা বহন করবেন না। পাক কর্তারা খরচ বৃদ্ধির দায় সরাসরি চাপিয়ে দিয়েছেন এসিসির উপর।


পাকিস্তানের এই যুক্তি আবার মানতে রাজি হননি এসিসি সভাপতি। সূত্রের খবর, বালির বৈঠকে জয় বলেছেন, এসিসি বোর্ড পুরো প্রতিযোগিতাই শ্রীলঙ্কায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু পিসিবি জোর করে চারটি ম্যাচ আয়োজন করেছিল।


পাক কর্তাদের কথা শোনার পর জয় বলেছেন, পাকিস্তান আয়োজনের দায়িত্ব ছাড়তে রাজি হয়নি। আয়োজক হিসাবে তারা শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট অবকাঠামো এবং অন্য সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করেছিল। তাই শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটকে খরচ মিটিয়ে দেওয়া উচিত পাকিস্তানের।


পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। যদিও পিসিবি সিইও নাসির বলেছেন, ‘হোটেল এবং বিমানের কয়েকটি বিল আমরা খতিয়ে দেখছি। দ্রুত সেগুলির টাকা দিয়ে দেওয়া হবে শ্রীলঙ্কাকে।’ চার্টাড বিমানের খরচ পাকিস্তান দেবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে। তাদের যুক্তি, যে সংস্থার মাধ্যমে চার্টার্ড বিমান ভাড়া করা হয়েছিল, সেটি অনুমোদিত নয়।


কিন্তু হাইব্রিড মডেলের এশিয়া কাপ আয়োজন-স্বত্ব বাবদ এসিসি পিসিবিকে ২৫ লাখ ডলার দিলেও সব মিলিয়ে তাদের খরচ হয়েছে ৪০ লাখ ডলারের মতো। যেহেতু এসিসি বাড়তি প্রায় ১৫ লাখ টাকা পিসিবিকে দিতে রাজি হয়নি, তাই পিসিবিও এলএলসির বাকি পাওনা ঝুলিয়ে রেখেছে।


এসিসি সূত্রে খবর পিসিবি এখনও পর্যন্ত ২ লাখ ৮১ হাজার ৭০০ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২ কোটি ৩৪ লাখ রুপি) দিয়েছে এসএলসিকে। আরও ২০ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮৫ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৭ কোটি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার রুপি) দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। পিসিবির দাবি, প্রতিযোগিতাটি এসিসির। তাই অতিরিক্ত খরচ তাদেরই বহন করতে হবে। হোস্টিং ফি বাবদ এসিসির কাছে আরও প্রায় ২১ কোটি রুপি দাবি করেছেন পিসিবি কর্তারা।


সূত্রঃ দেশ রূপান্তর