এবার প্রতারণার শিকার হলো ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড

ক্রিকেট দুনিয়া December 5, 2023 676
এবার প্রতারণার শিকার হলো ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড

আর্থিক প্রতারণার শিকার হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। স্পন্সরের কাছে বড় অঙ্কের অর্থ বকেয়া থাকায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে সেই স্পন্সর কোম্পানিকে নোটিশ পাঠিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলেছে আদালত।


ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অন্দরে চলছে ডামাডোল। বড়সড় আর্থিক প্রতারণার শিকার হয়ে হয়েছে বিশ্বের ধনীতম ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা BCCI-কে। অভিযোগের আঙুল উঠেছে টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন টাইটেল স্পন্সর এড টেক কোম্পানি বাইজুসের বিরুদ্ধে। ভারতের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা BCCI-এর সাথে প্রাথমিকভাবে ২০২২ সালের মার্চ অব্দি চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলো বাইজুস। মোবাইল প্রস্তুতকারী সংস্থা ওপো’কে সরিয়ে বাইজুসের লোগো জায়গা করে নিয়েছিলো বিরাট, রোহিত, স্মৃতি মান্ধানা, হরমনপ্রীতদের জার্সির সামনে। ওপো’র তুলনায় প্রতি ম্যাচে প্রায় ১০% বেশী অর্থ ভারতীয় বোর্ডকে দেওয়ার অঙ্গীকার করে বাইজুস। তারপর এড-টেক কোম্পানিটি আরও একবছর চুক্তি বাড়ায় BCCI-সঙ্গে। নয়া চুক্তিতে তারা ২০২৩ এর শেষ অবধি ভারতের জার্সি স্পন্সর হিসেবে থাকতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। নতুন চুক্তিটির আর্থিক মূল্য প্রায় ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বলে ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলের।


আর্থিক জটে আটকে পড়ায় চুক্তির সময়সীমা সম্পূর্ণ করার আগেই সরে যেতে চেয়েছিলো বাইজুস। মার্চের শেষে চুক্তিতে ইতি টানার আবেদন জানিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে ই-মেল’ও করেছিলো তারা। ভারতীয় বোর্ডের পক্ষ থেকে বাইজুসের আবেদনকে মান্যতা দেওয়া হয়। তড়িঘড়িই নতুন স্পন্সর খুঁজতে উঠে পড়ে লাগতে হয়েছিলো BCCI-কে। শেষ পর্যন্ত ফ্যান্টাসি গেমিং কোম্পানি ড্রিম ইলেভেনের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় ভারতের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা। সেইমত গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে অতীত হয়েছে বাইজুস। কোহলি, রোহিত’দের জার্সিতে শোভা পাচ্ছে ড্রিম ইলেভেন সংস্থার লোগো।এত অবধি সবকিছু ঠিকই ছিলো। নতুন টাইটেল স্পন্সর, নতুন কিট স্পন্সর খুঁজে নিয়ে গুছিয়ে নিয়েছিলো ভারতীয় দল। কিন্তু গোল বেঁধেছে আগের স্পন্সর বাইজুস নিজেদের বকেয়া না মেটানোয়। আর্থিক ক্ষতি রুখতে মরিয়া বিসিসিআই আইনি পথে হাঁটার পরিকল্পনা শুরু করেছে ইতিমধ্যেই।


বাইজুসের সঙ্গে যখন সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলো ভারতের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা BCCI, তখন চুক্তি অনুযায়ী বাকি থাকা অর্থ মিটিয়ে দেওয়ার কথা হয়েছিলো। সেই সময় নাম গোপন রাখার শর্তে এক বিসিসিআই কর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েওছিলেন যে, হ্যাঁ, ওনারা চুক্তি থেকে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। আমরা এপেক্স কাউন্সিলের বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা করবো। চুক্তি অনুযায়ী যে সব দায়ভার ওনাদের রয়েছে, সেগুলি মিটিয়ে দিলে বিসিসিআই ওনাদের বিদায় নেওয়া থেকে আটকাবে না।” কিন্তু সেই শর্তের খেলাপ করেছে বাইজুস। এমনটাই অভিযোগ ভারতীয় বোর্ডের। যে অর্থ বকেয়া রয়েছে, তার পরিমাণ প্রায় ১৫৮ কোটি। সেই বকেয়া অর্থের দাবীতে ইতিমধ্যেই বোর্ডের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বাইজুসের উদ্দেশ্যে। ২ সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু মেলে নি অর্থ। এখন আইনি রাস্তা নেওয়া ছাড়া উপার দেখছেন না রজার বিনি, জয় শাহ’রা।


মানিকন্ট্রোলে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে ৮ সেপ্টেম্বর এই বকেয়া না মেটানোর বিষয়টি সামনে আসে। ১৫ নভেম্বর কেস নথিভুক্ত করা হয়। আদালতে প্রথম শুনানির তারিখ হিসেবে ২৮ নভেম্বরকে বেছে নেওয়া হলেও, পরে তা পিছিয়ে হয়েছে ২২ ডিসেম্বর। আর্থক তছরুপ ও আরও নানাবিধ অভিযোগে এর আগেও অভিযুক্ত হয়েছে বাইজুস। তাদের মালিক কোম্পানি থিঙ্ক অ্যান্ড লার্নের জন্য শোকজ নোটিস জারি করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ED। গোটা বিষয়টি নিয়ে কোম্পানির পক্ষে এখনও কোনোরকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি। তবে ঘোরতর সমস্যায় যে রয়েছে এড-টেক কোম্পানিটি তা গত কয়েক মাসে তাদের কর্মী সঙ্কোচন নীতি থেকেই পরিষ্কার। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অভিযোগের পর আইনি জটিলতা বাড়লো তাদের জন্য।