ইতিহাস গড়ে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম টেস্ট জয়। এ তো শুধু জয় নয়, এ যেন স্বপ্ন সত্যি হওয়া! নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এর আগে কোনো ফরম্যাটেই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সেই আক্ষেপ ঘুচলো ক্রিকেটের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ফরম্যাট দিয়েই।
ঘরে বাইরে মিলিয়ে ১৬ বারের চেষ্টায় অবশেষে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অধরা টেস্ট জয় ধরা দিলো। এতে করে নিউজিল্যান্ডের নিজেদের দুর্গে টানা অপরাজিত থাকার রেকর্ডেও ছেদ টানলো টাইগাররা।
এই হারের আগে ঘরের মাঠে টানা ১৭ টেস্ট অপরাজিত ছিল নিউজিল্যান্ড। সর্বশেষ তারা নিজেদের মাটিতে টেস্ট হেরেছিল ২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এরপর আর কোনো দলই জয়ের মুখ দেখেনি কিউইদের মাটিতে।
উপমহাদেশের দলগুলোর রেকর্ড তো আরও শোচনীয়। গত ১১ বছরেও কিউইদের মাটিতে টেস্ট জিততে পারেনি তারা। সর্বশেষ জিতেছিল পাকিস্তান, সেই ২০১০ সালে।
পাকিস্তান নিউউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের সর্বশেষ সিরিজটিতে হারে ২০২০ সালে, ২-০ ব্যবধানে। ভারত তার আগের বছর হারে একই ব্যবধানে। আর শ্রীলঙ্কা ২০১৮ সালে হেরেছিল ১-০ ব্যবধানে।
ভাবা যায়য়! কিউইদের যে দাপট থামাতে পারেনি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো দল; সে দাপট এবার থামিয়ে দিলো বাংলাদেশ।
শুধু তাই নয়। ২০১৭ সাল থেকে ঘরের মাঠে টানা ৮টি টেস্ট সিরিজ জিতেছে নিউজিল্যান্ড। এবার সেই রেকর্ডও ভাঙছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে জিতলেও এবার আর সিরিজ জয়ের আর সম্ভাবনা নেই কিউইদের।
সবমিলিয়ে দেশের বাইরে ৬১ টেস্টে ষষ্ঠ জয়ের দেখা পেলো বাংলাদেশ। আর র্যাংকিংয়ের সেরা পাঁচ দলের বিপক্ষে বিদেশের মাটিতে এটিই টাইগারদের প্রথম টেস্ট জয়। ওহ, নিউজিল্যান্ড তো বর্তমান টেস্ট চ্যাম্পিয়নও। সেই হিসেবটিও বা বাকি রাখা কেন!
নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস টাইগারদের
প্রথম চারদিন যেমন খেলেছেন মুমিনুল-ইবাদতরা, তাতে এই টেস্টে জয়ই পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দলটা যে বাংলাদেশ! সম্ভাবনা জাগিয়েও অতীতে হারের কম নজির নেই তাদের। তবে এবার ১৬ কোটি মানুষের হৃদয় ভাঙেনি। এবার আর কোনো অঘটন হয়নি। বাংলাদেশ জিতেছে। নিউজিল্যান্ডকে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ৮ উইকেটে উড়িয়ে টাইগাররা গড়েছে ইতিহাস। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নেয়া ইবাদত হয়েছেন ম্যাচসেরা।
মাত্র ৪০ রানের টার্গেট ছিল। দলীয় ৩ রানে সাদমান ইসলাম (৩) বিদায় নিলেন।
তবে অধিনায়ক মুমিনুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্ত দেখে শুনে এগোচ্ছিলেন। দলকের জয় থেকে ৬ রান দূরে রেখে শান্ত (১৭) ফেরেন সাজঘরে। ১৭ তম ওভারে কাইল জেমিসনকে চার মেরে জয় নিশ্চিত করেন মুশফিকুর রহীম। মুমিনুল ১৩ এবং মুশফিক ৫ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এই প্রথম কোনো আন্তজার্তিক ম্যাচ জিতলো বাংলাদেশ।
এর আগে ১৪৭/৫ নিয়ে পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের টার্গেট ছিল কিউইদের দ্রুত অল আউট করা। ইবাদত হোসেন -তাসকিন আহমেদরা স্বাগতিক দলের বাকি পাঁচ ব্যাটারকে দাঁড়াতেই দেয়নি ক্রিজে। ১৬৯ রানেই গুটিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড।
চতুর্থ দিনে চার উইকেট নেয়া ইবাদত পঞ্চম দিনে নিয়েছেন আরো দুই উইকেট। রস টেইলর (৪০) ও কাইল জেমিসনকে ফিরিয়েছেন তিনি। তাসকিন আহমেদ তুলে নেন রাচিন রবীন্দ্র ও টিম সাউদিকে। ট্রেন্ট বোল্টের উইকেটটি গেছে মেহেদী হাসান মিরাজের ঝুলিতে।
এর আগে বোলারদের নৈপুণ্যে নিউজিল্যান্ডকে প্রথম ইনিংসে ৩২৮ রানে বেঁধে ফেলে বাংলাদেশ। বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলাম ও অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ৩টি করে উইকেট নেন। অধিনায়ক অকেশনাল স্পিনার মুমিনুল হক সৌরভের শিকার ২ উইকেট।
এরপর ব্যাটারদের কল্যাণে ৪৫৮ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। দলের কেউ সেঞ্চুরি না পেলেও ফিফটি করেন মাহমুদুল হাসান জয় (৭৮), নাজমুল শান্ত (৬৪), মুমিনুল (৮৮), লিটন (৮৬) এবং ৪৭ রান আসে মিরাজের ব্যাট থেকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড: ৩২৮ ও ১৬৯
বাংলাদেশ: ৪৫৮ ও ৪২/২
ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: ইবাদত হোসেন
সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে।