আলোর গতি নির্ধারিত হয়েছিল আজ থেকে ৩৪০ বছর আগে। আর সেই ঐতিহাসিক ঘটনাটি ডুডলের মাধ্যমে স্মরণ করল গুগল।
আলোর গতি কে বের করেছিলেন? : ডেনিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ওলে রোয়েমার ১৭৭৬ সালে আলোর গতি বের করেন। তবে রোয়েমারই প্রথম ব্যক্তি নন যিনি আলোর গতি বের করার চেষ্টা করেছিলেন। ১৬৩৮ সালে গ্যালিলিও একবার এ কাজটি করার চেষ্টা করেন।
গ্যালিলিওর পদ্ধতিতে দুজন মানুষ কয়েক মাইল দূরে দুই পাহাড়ের চূড়ার দাঁড়ান দুটো ল্যাম্প হাতে নিয়ে। সেখানে দাঁড়িয়ে একে অপরের দিকে ল্যাম্প তাক করে আলো জ্বালাবে। একজন আলো জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গেই অপরজন জ্বালাবেন।
দুটো ল্যাম্প কত দূরে আছে তা কোনো ব্যাপার না হলেও গ্যালিলিও সময়ের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারেননি। তবে বুঝতে পেরেছিলেন, আলোর গতি এত বেশি যে তা এভাবে বের করা সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত তিনি আলোর গতি সঠিকভাবে বের করতে পারেননি। তবে একে অসীম বলে মত দেন। তবে তিনি বের করেছিলেন যে, শব্দের গতির ১০ গুণ বেশি গতিতে এগোয় আলো।
ওলে রোয়েমার আলোর গতি বের করতে কয়েক মাইল দূরত্ব ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। পরে ১৬৭৩ সালে রোয়েমার এ কাজটি করার চেষ্টা করেন। তিনি খেয়াল করে দেখেন, বৃহস্পতি গ্রহের একটি চাঁদ চন্দ্রগ্রহণের মধ্যকার সময়কে বলা হয় 'আইও'। এটি ১৬১০ সালে আবিষ্কার করেছিলেন গ্যালিলিও।
এই সময়ের পার্থক্য পর্যবেক্ষণ করে রোয়েমার হিসাব করে বের করেন যে, আলো ১০-১১ মিনিট সময় নেয় পৃথিবীর কক্ষপথের সমান দূরত্ব পাড়ি দিতে। এর অর্থ হলো, আরো প্রতি সেকেন্ডে ২০ কোটি মিটারের মতো পথ পাড়ি দেয়।
আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে ঠিক ঠিক ২৯ কোটি ৯৭ লাখ ৯২ হাজার ৪৫৮ মিটার। ১৭২৮ সালে আরো কাছাকাছি আসেন জেমস ব্র্যাডলে। তিনিই তারার আলো নিয়ে কাজ করেছিলেন। তিনি বের করেন, আলো প্রতি সেকেন্ডে ২৯ কোটি ৫০ লাখ মাইল পথ যায়।
কিন্তু পুরোপুরি সঠিক ফলাফল ১৯৭৫ সালের আগে বোঝা যায়নি। বিশেষ করে ওজন এবং পরিমাপের বিষয় নিয়ে জেনারেল কনফারেন্স হওয়ার পর আলোর গতি কত তা জানাটা জরুরি হয়ে ওঠে।
আলোর গতি বোঝাতে 'c' ব্যবহৃত হয় এবং তা 'ইউনিভার্সাল ফিজিক্যাল কনস্ট্যান্ট' বলে বিবেচিত হয়। এর অর্থ আলোর গতি নির্দিষ্ট এবং তা কখনো বদলায় না।
যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ: আলবার্ট আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটি স্পেস এবং টাইম বিষয়ে ধারণাকে আরো প্রতিষ্ঠিত করে। শূন্য স্থানে আলোর গতি সব সময় এক থাকে- এই ধারণার ব্যবহার ঘটে এই বিখ্যাত তত্ত্বে।
আলোর গতি বিষয়টা কি বাস্তব?: আলো গতি বিষয়টা প্রকৃতির এক মৌলিক ধারণা যা কখনো বদলায় না। কিন্তু সম্প্রতি কয়েকজন পদার্থবিদ বলেন যে, কোনো এক সময় আলোর গতি হয়তো সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল, যা এখন নেই।
কয়েক যুগ গবেষণার পর ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের পদার্থবিদরা জানান, এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড গঠনের সময় আলো আরো বেশি গতিতে চলতো। কিন্তু সেই গতি এখন আর নেই।
যদি আলোর গতি কমেই থাকে, তবে পদার্থবিজ্ঞানকে আমরা হয়ত অন্যভাবে বুঝেছি। গবেষকরা জানান, আমরা বহু বছর কেবল এই নিয়েই গবেষণা করেছি যে, পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কে বোঝার পদ্ধতি ভুল ছিল কিনা?
জোয়অও ম্যাগুইজো জানান, আলো গতি নির্দিষ্ট ধরেই গোটা পদার্থবিজ্ঞান পরিচালিত হয়েছে। তাই গোটা বিষয়কে খুব বেশি এলোমেলো না করে আমরা আলোর গতির বিষয়ে জানার চেষ্টা করেছি।
আলোর গতির চেয়ে কি বেশি গতিতে যাওয়া সম্ভব? : ২০১১ সালে বিজ্ঞানীরা ভাবতে থাকেন, আলোর চেয়ে দ্রুত গতিতে কি ধাবমান হওয়া সম্ভব কিনা। এই ধারণার মাধ্যমে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে বিষয়ে আইনস্টাইনের একটি মৌলিক তত্ত্বকে বিনষ্ট করা হয়।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনের একদল গবেষক এ নিয়ে কাজ করছেন। সে দলের মুখপাত্র অ্যান্টোনিও এরিডিট্যাটো জানান, তিন বছরের এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, নিউট্রিনোকে জেনেভা থেকে ইতালির গ্রান স্যাসোতে পাঠানো হয়েছে ৬০ ন্যানো সেকেন্ডে। এই গতি আলোর চেয়ে বেশি। কিন্তু ধরে নেওয়া হয়, এটা ভুল হিসাব ছিল। তারের ভুল সংযোগের জন্যই হয়ত এমন ঘটেছিল।
সূত্র : টেলিগ্রাফ