পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে মানুষ বিভিন্ন দুর্ঘটনার ভেতর দিয়ে গেছে। কিছু দুর্ঘটনা ইতিহাসের অংশ হিসেবে টিকে আছে। প্রাণহানি, ভয়াবহতা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ আর্থিক ক্ষতির কারণে কিছু কিছু দুর্ঘটনা পৃথিবী যতদিন থাকে ততদিন এই ক্ষত বয়ে বেড়াবে। আর দুর্ঘটনার কথা শুনলেইতো চোখে ভেসে উঠে হতাহতের আহাজারিময় দৃশ্য।
• আর্থিক ক্ষতি ও প্রাণহানির দিক দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ ১০টি দুর্ঘটনার খবর তুলে ধরা হলো......
টাইটানিক ডুবি : পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত দুর্ঘটনা বোধহয় টাইটানিক ডুবে যাওয়ার দুর্ঘটনা। ১৯১২ সালে সাগরের বুকে গা ভাসাল বিলাসবহুল সেই প্রমোদতরী। ওই সময়ে টাইটানিকই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে টাইটানিক তার প্রথম যাত্রাতেই ডুবে যায়। টাইটানিকটি ১৯১২ সালে বৃটেনের সাউদাম্পটন থেকে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে রওয়ানা হয়েছিল। কেউ ভাবেনি টাইটানিক ডুবে যাবে। কিন্তু ১৫ এপ্রিল মধ্যরাতে বিশাল এক বরফ খণ্ডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় টাইটানিক। এতে পানিতে ডু্বে মারা যায় প্রায় দেড় হাজার যাত্রী। টাইটানিক নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল তৎকালীন ৭০ লাখ ডলার। যা আজকের হিসাবে প্রায় ১৫০ লাখ ডলারের সমান।
জার্মানির অহেলটাল ব্রিজে ট্যাংকার বিস্ফোরণ : ২৬ আগস্ট ২০০৪ সাল। জার্মানির অহেলটাল ব্রিজে একটি কার ও তেলবাহী একটি ট্যাংকারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ট্যাংকারটিতে প্রায় ৩২ হাজার লিটার তেল ছিল। সংর্ঘষের পর ট্যাংকারটি ব্রিজের রেলিং ভেঙে ৯০ ফিট নিচে পড়ে এবং প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয়। অহেলটাল ব্রিজের চারপাশটা ছিল খুব মনোরম। সেই মনোরম দৃশ্য হঠাৎ আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলে গেল যেন। বিস্ফোরণের পর পুরো ব্রিজ ধ্বংস হয়ে যায়। সেতুটি তাৎক্ষণিক মেরামতেই ব্যয় হয় ৪০ মিলিয়ন ডলার। আর পুনঃস্থাপনের ব্যয় প্রায় ৩১৮ মিলিয়ন ডলার।
চ্যাটসওয়ার্থে ট্রেন সংঘর্ষ : ক্যালির্ফোনিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসের চ্যাটসওয়ার্থে ২০০৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর দুইটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ইউনিয়ন প্যাসেফিক মালবাহী ও মেট্রোলিংক যাত্রীবাহী ট্রেনের এই ভয়াবহ সংঘর্ষ পৃথিবীর ইতিহাস ভয়াবহ দুর্ঘটনার মধ্যে একটি। এই দুর্ঘটনায় ২৫ জন মারা যায়। দুর্ঘটনাটি ঘটে যাত্রীবাহী মেট্রোলিংক ট্রেনটি রেড সিগন্যাল অমান্য করার কারণে। এর জন্য দায়ী করা হয় মেট্রোলিংক ট্রেনের প্রকৌশলীকে, কারণ সে তখন লিখিত বার্তা আদান প্রদানে ব্যস্ত ছিল। আর এই দুর্ঘটনার কারণে মেট্রোলিংকের ৫০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়।
বি-টু বোম্বার ক্রাশ : আকাশ পথে দুঘর্টনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং ব্যয়বহুল দুর্ঘটনা এটি। ২০০৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গুয়ামে এন্ডারসন এয়ার ফোর্স বেজ থেকে উড্ডয়নের পর রানওয়েতেই বিস্ফোরণ ঘটে। দুর্ঘটনা পরবর্তী তদন্তকারী জানায়, কম্পিউটার ডেটা সিস্টেম নিয়ন্ত্রণে ভুলের কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটে। হঠাৎ করে বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে গিয়ে বি-টু বিমানকে আঘাত করলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে অলৌকিকভাবে বিমানের চালক বেঁচে যান। পৃথিবীতে মাত্র ২১টি বি-টু বোম্বার তৈরি হয়েছিল এবং পৃথিবীর ইতিহাসে এটা সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিমান দুর্ঘটনা। কারণ বিমানটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছিল ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এক্সন ভ্যালদেজ অয়েল স্পিল : ১৯৮৯ সালের ২৪ মার্চ আলাস্কার প্রিন্স উইলিয়াম সাউন্ডে তেল ছড়িয়ে পড়ার ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল। বিশাল আকার এক ট্যাংক ডুবে গিয়ে ১১ মিলিয়ন গ্যালন তেল ছড়িয়ে পড়ে। এই তেল আলাস্কার উপসাগরীয় এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পরিবেশ বিপর্যয়ের মাধ্যমে মানুষের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হিসেবে এই ঘটনাকে দেখা হয়। আর এই ঘটনা প্রাণ ও পরিবেশের ওপরও ফেলেছিল মারাত্মক প্রভাব। এটা খুব আশ্চর্যের ব্যাপার যে, ছড়িয়ে পড়া তেল পরিস্কারের ব্যয় হয়েছিল ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।