আক্ষরিক অর্থেই ঘরের ছেলে, দুই বছর অন্য দলে খেলে তাদের আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করে আবার ফিরেছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে। আর ঘরের মাঠে নিজের প্রথম ম্যাচেই কিনা দুয়োতে দুয়োতে কান ঝালাপালা!
চার মাস আগে না ভাবতে পারলেও গতকালের আগে নিশ্চয় জানা ছিল, এমন কিছু ঘটবে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষ। গতকাল ওয়াংখেড়েতে ৬ উইকেটে হেরেছে মুম্বাই। ম্যাচে ফেরার চেষ্টায় যেখানে অধিনায়কের সব ধরনের কৌশল খাটানোর কথা, সেখানে বোলিংই করেননি পান্ডিয়া!
প্রথম দল হিসেবে এবারের মৌসুমে টানা তিন ম্যাচ হেরেছে মুম্বাই। হারের নানা কারণ আছে। সূর্যকুমার যাদবের মতো একজন নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান চোটের কারণে খেলছেন না। মূল একাদশের আরেক বিদেশি পেসারও নেই। কিন্তু সমর্থকদের চোখে সব দায় একজনের, পান্ডিয়া।
পান্ডিয়ার মুম্বাই ফেরার প্রক্রিয়াটাই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। গুজরাটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও ভারতীয় অলরাউন্ডারের সঙ্গে বিশ্বকাপের আগে গোপনে আলোচনা করে মুম্বাই। গুজরাটের অধিনায়ক হয়েই তাদের শিরোপা এনে দিয়েছেন পান্ডিয়া, পরের মৌসুমেও তুলেছেন ফাইনালে। তাই পান্ডিয়া শর্ত দিয়েছিলেন, ফিরলে অধিনায়ক হিসেবে ফেরাতে হবে।
মুম্বাইকে পাঁচটি আইপিএল জেতানো অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে সরিয়ে তাঁকে অধিনায়ক করার প্রস্তাবেও পিছপা হয়নি মালিকপক্ষ। এবং এ ব্যাপারে গুজরাটকে রাজি করাতে ওই ফ্র্যাঞ্চাইজিকে অভূতপূর্ব এক কাণ্ডও ঘটিয়েছে। ক্রিকেটে দলবদলের ফি বলে কিছু না থাকলেও পান্ডিয়াকে ছেড়ে দিতে গুজরাটকে ১০০ কোটি রুপিও দেওয়া হয়েছে।
৩৬ বছর বয়সী রোহিতের চেয়ে ৩০ বছর বয়সী পান্ডিয়া, যিনি ভারতের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক হবেন, তাঁর পেছনে বিনিয়োগ করাকেই ভালো মনে করেছে মুম্বাই। কিন্তু নিজেদের কিংবদন্তির সঙ্গে এমন আচরণ মেনে নিতে পারেনি মুম্বাই ও ভারতের সাধারণ ক্রিকেট সমর্থকেরা।
প্রথম ম্যাচটিই ছিল গুজরাটের মাঠে। সাবেক দলের সমর্থকেরা ওভাবে গোপন সন্ধির মাধ্যমে দল ছাড়া ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দুয়োতে দুয়োতে। মুম্বাইয়ের পরের ম্যাচ ছিল হায়দরাবাদের মাঠে। কিন্তু সে ম্যাচেও তাঁকে দুয়ো শুনতে হয়েছে। গতকাল ঘরের মাঠে তো রীতিমতো কান ঝালাপালা হয়েছে তাঁর।
ম্যাচের শুরুতে টস করতে নামার সময়ই তাঁকে দুয়ো দিয়েছেন ভক্তরা। এমনই পরিস্থিতিতে যে উপস্থাপক সঞ্জয় মাঞ্জরেকার পর্যন্ত দর্শককে ‘আচরণ’ ঠিক করতে বলেছেন।
মাঠে যখনই পান্ডিয়ার দেখা পেয়েছেন সমর্থকেরা, দিয়েছেন দুয়ো। গতকাল রাজস্থানের বিপক্ষে ব্যাটিং ধসে পড়েছিল মুম্বাই। ২০ রানে ৪ উইকেট হারানো দলের হয়ে পান্ডিয়াই প্রতিআক্রমণে উঠেছিলেন। ৬ চারে ২১ বলে ৩৪ রান করলেও সমর্থকদের ভালোবাসা পাননি। দলের হয়ে কেউ চার মারছেন দেখে স্বভাবজাতভাবে উদ্যাপন করলেও যখনই তাদের মনে পড়ছিল চার মারছেন পান্ডিয়া, উল্লাসটা মরে আসছিল।
এমন অদ্ভুত পরিস্থিতিতে দলকে বিপদে রেখে পান্ডিয়া বিদায় নিতেই দর্শক আবার দুয়ো দেওয়াতে ফিরে যান। ফিল্ডিংয়ের সময়ও তা কমেনি। এর মধ্যে জস বাটলারের দেওয়া একটি ‘প্রায়’ অসম্ভব এক ক্যাচ ফেলে দিয়েও আবার সমর্থকের ক্ষোভ বাড়ান মুম্বাই অধিনায়ক। এমনই অবস্থা দাঁড়িয়েছিল যে সীমানার কাছে ফিল্ডিং করতে যাওয়া রোহিত শর্মা সমর্থকদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু ক্ষিপ্ত সমর্থকদের এতেও ঠান্ডা করা যায়নি।
সূত্রঃ ইন্ডিপেন্ডেন্ট অনলাইন