বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সি মানেই লাল-সবুজ রঙের মিশ্রন । টাইগারদের প্র্যাকটিস কিট থেকে শুরু করে জ্যাকেট সবখানেই থাকে লাল-সবুজের সমারোহ। ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে মেরুন রঙের জার্সি দেখা যায় শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলেই । ক্রিস গেইল-আন্দ্রে রাসেলরা এই রঙের জার্সি গায়েই মাঠ মাতিয়েছেন। এবার বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমেও দেখা মিললো মেরুন রঙের জ্যাকেট তথা ‘মেরুন জ্যাকেট’। বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে বিশেষ এই পোশাকের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে গত বিশ্বকাপ থেকে।
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রথম মেয়াদে কোচ থাকাকালে একটি ক্রিকেটীয় পরিভাষা চালু করেছিলেন। তা হচ্ছে ‘ইম্প্যাক্ট ক্রিকেটার’। এর মাধ্যমে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো ক্রিকেটার খোঁজার দিকেই তার মনোযোগ ছিল। দ্বিতীয় মেয়াদেও টাইগারদের দায়িত্ব নিয়ে তিনি সেটাই বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছেন। চালু করেছেন ‘মেরুন জ্যাকেট’ পুরস্কার। যা একে একে সাকিব আল হাসান, মেহেদী মিরাজ হয়ে উঠেছে জাকের আলি অনিকের গায়েও।
ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে শুভসূচনা করে বাংলাদেশ। সে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হন মেহেদী হাসান মিরাজ। সেদিনই যাত্রা শুরু মেরুন জ্যাকেটের।
তবে ম্যাচ সেরা হলে বা সর্বোচ্চ রান করলেই যে শুধু এই মেরুন জ্যাকেট দেওয়া হয়, এমনও নয় ব্যাপারটা। ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া কোনো ছোট্ট পারফরম্যান্সের জন্যও পেতে পারে এই জ্যাকেট। এমনকি হারা ম্যাচে বীরত্বপূর্ণ কিছু করে দেখাতেও পারলে গায়ে উঠতে পারে মেরুন জ্যাকেট। এই জ্যাকেট পেলে সেই পারফর্মারের নাম, ম্যাচ আর পারফরম্যান্স কালো মার্কার দিয়ে ছোট্ট করে লিখে দেওয়া হয় জ্যাকেটটিতে।
এই বিশেষ জ্যাকেট গায়ে চাপালে আলাদা একটা দায়িত্বও চাপে সেই খেলোয়াড়ের গায়ে। এই পোশাক গায়ে গোটা দলকেই চাঙ্গা করে তোলার দায়িত্বও নিতে হয় সেই খেলোয়াড়কে।
মেরুন জ্যাকেটের ভাবনার শুরুটা কিভাবে হয়েছিল, জানালেন টিম ম্যানেজার নাফিস ইকবাল, ‘এই মেরুন জ্যাকেটের কনসেপ্ট এসেছে একটা গান থেকে। যেখানে একজনকে দেখা যায় একটা মেরুন জ্যাকেট পরে পুরো ব্যান্ডটাকে উৎসাহিত করে। প্রথমে ব্যান্ডটা খুব নার্ভাস থাকে, তাদের ট্রায়াল চলে ওই সময়। তখন হঠাৎ করে একজন এসে গানটা এত সুন্দর করে গায়, সবাইকে পুরো উত্তেজিত করে ফেলে। ওই জিনিসটাই আমাদের এখানে এই কনসেপ্ট নিয়ে এসেছে।’
এ নিয়ে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেন, ‘কিয়ারার (আমেরিকান পপ-শিল্পী) ওই গানের ভিডিও দেখে মনে হচ্ছিল, আমাদের দলটাও তো এমন, সবাই অনেক চিন্তাগ্রস্ত থাকে। সেই গানে একজন চেয়ারের ওপর ওঠে গান ধরে, তাতে সবাই উজ্জীবিত ও নির্ভার হয়ে গাইতে থাকে। মেরুন জ্যাকেট পরা ব্যক্তি রুমের আবহ বদলে দেয়। এই মানুষটার ছোট্ট কাজই পুরো পরিস্থিতি বদলে দেয়।’
প্রথমবার মেরুন জ্যাকেট গায়ে চাপিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই জ্যাকেট নিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা সবাই ভালো খেলি, কিন্তু টিমের মধ্যে একটা খেলোয়াড় থাকে যে কিনা টিমটাকে বুস্টআপ করে একটা জায়গায় নিয়ে যায়। হয়ত সে অনেক বেশি কন্ট্রিবিউট করে না, হয়ত ছোট একটা কন্ট্রিবিউট করে, এর জন্যই টিমটা বুস্টআপ হয় এবং জেতে। আর এই মেরুন জ্যাকেটটা সে রকম একজনই পেয়ে থাকেন। ভালোই লেগেছিল যখন এই মেরুন জ্যাকেটটা পেয়েছিলাম এবং ভবিষ্যতে আরও পাবো।'
সে জন্যই হার-জিত ছাপিয়ে মেরুন জ্যাকেট দলকে উজ্জীবিত করতে ভূমিকা রাখছে। তাই হারা ম্যাচে দারুণ ইনিংস খেলে এই জ্যাকেট গায়ে চাপিয়েছেন জাকের আলী। কখনওবা তানজিদ তামিম একটা ছক্কা হাঁকিয়েই পেয়েছেন মেরুন জ্যাকেট।