অ্যাডিলেইডে আগের টেস্টে দেশের হয়ে সাদা জার্সিতে পথচলা শুরু হয়েছিল শামার জোসেফের । টেস্ট অভিষেকটা তিনি রাঙিয়েছিলেন ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করে। পায়ের চোটে যার মাঠে নামা নিয়ে ছিল শঙ্কা। সেই জোসেফের হাত ধরেই ব্রিসবেনের গ্যাবায় ইতিহাস লিখল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গায়ানার এক নিভৃত গ্রাম থেকে ক্যারিবীয়দের রূপকথার এই নায়কের ওঠে আসার গল্প আপনাকেও অনুপ্রাণিত করবে
মিচেল স্টার্কের বিধ্বংসী ইয়র্কারে পায়ের আঙুল ভেঙে গিয়েছিল শামার জোসেফের। সতীর্থদের কাঁধে ভর দিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। রক্তাক্ত হয়ে মাঠ ছাড়া ডানহাতি এই পেসারের টেস্ট তখনই শেষ হয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু কে জানতো এই শামারের হাত ধরেই ব্রিসবেনের গ্যাবায় ইতিহাস লিখবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ! উত্তেজনায় ঠাসা দিবা-রাত্রির এই টেস্টের রঙ বারবার বদলাচ্ছিল। ম্যাচের ভাগ্য পেন্ডুলামের মতো দুলছিল দু’দিকে।
১৯৯৭ সালে সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়াকে তাদের মাটিতে হারাতে পেরেছিল ক্যারিবীয়রা। ২৭ বছর পর আবার এমন আনন্দের দিন পেল তারা। দলকে অবিশ্বাস্য এমন দিন এনে দেওয়ার নায়ক আর কেউ নন, শামার জোসেফ। ৬৮ রানে ৭ উইকেট শিকার করেছেন এই ক্যারিবীয় পেসার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই পেস সেনসেশন গ্যাবায় ঐতিহাসিক জয়ের পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলছিলেন, আজ (রোববার-টেস্টে চতুর্থ দিন) সকালেও আমি মাঠে আসার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। ডাক্তার আমাকে ফোন করেছিলেন, আমি তখন বিছানায়। তাকে বললাম আমি ভালো নেই, প্রচুর ব্যাথা (পায়ের আঙুলে) হচ্ছে। তিনি আমাকে মাঠে আসতে বললেন। তার বিশ্বাস ছিল আমি পারবো। আমি সত্যিই পেরেছি। আমি আমার দেশ এবং আমার দলের জন্য এটাই করতে চেয়েছিলাম। চিকিৎসক, সতীর্থ, টিম ম্যানেজমেন্ট ছাড়াও সমর্থকদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
গায়ানার বারাকারা নামে এক নিভৃত গ্রামে জন্ম জোসেফের। যেখানে নদীপথে পৌঁছাতেও কখনও কখনও দুইদিন লেগে যায়। সাড়ে তিনশ মানুষের এই গ্রামে বেড়ে ওঠা জোসেফের। যেখানে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টেলিফোন নেটওয়ার্ক, কিংবা ইন্টারনেট সুবিধা ছিল না। এমন একটি গ্রামেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি শামারের।
টেস্ট শুরুর আগে এমন সমাপ্তি কেউ কল্পনা করেছিলেন কি না সন্দেহ। অ্যাডিলেডে সিরিজের প্রথম টেস্টে তিন দিনের মধ্যে হেরে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্রিসবেনে দিবারাত্রির ম্যাচটিতেও সহজেই হেরে যাবে বলে মনে করেছিলেন অনেকেই। কে জানত, শামার জোসেফ নামের সেই তরুণ তুর্কি ব্রিসবেনে সবুজ গালিচায় লিখবেন নয়া ইতিহাস।