প্রথমে ফিলিস্তিনির সমর্থনে আর্মব্যান্ড পড়ায় তিরস্কার এরপর শান্তির প্রতিকেও আপত্তি জানাচ্ছে আইসিসি । এতেই অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার উসমান খাজা আর আইসিসির দ্বন্দ্ব চরমে পৌছেছে । তবে এই মুহূর্তে অনেককেই পাশে পাচ্ছেন খাজা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার মাইকেল হোল্ডিং তো দ্বিমুখী আচরণের জন্য আইসিসিকে ধুয়ে দিয়েছেন।
নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসের একটি বার্তা নিয়মিতই ব্যাটে প্রদর্শন করেন মার্নাস লাবুশেন। সেখানে কোনো বাধা দেয়নি আইসিসি। কিন্তু বুটে শান্তির প্রতীক ব্যবহার করতে কেন উসমান খাজাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি, তা বুঝতে পারছেন না প্যাট কামিন্সও।
অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক জোর দিয়েই বলেছেন, তাদের গোটা দল খাজার পাশে আছে। পার্থ টেস্টে বার্তা লেখা কেডস পরে খেলার অনুমতি না পাওয়ার পর মেলবোর্ন টেস্টে শান্তির প্রতীক সম্বলিত কেডস পরার অনুমতি চেয়েছিলেন খাজা। একটি ঘুঘু পাখির মুখে জলপাই শাখা সম্বলিত লোগোসহ কেডস পরে অনুশীলনও করেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার।
বৈশ্বিক মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা অনুযায়ীই ম্যাচে এটি ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছিলেন খাজা। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ও অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের ছাড়পত্রও তিনি পেয়েছিলেন। কিন্তু আইসিসি তাকে এটি ব্যবহারের অনুমতিও দেয়নি। তাদের যুক্তি, আইন অনুযায়ী এই ধরনের ব্যক্তিগত বার্তা প্রকাশ করা যাবে না পোশাকে।
অস্ট্রেলিয়ারই আরেক ব্যাটসম্যান লাবুশেন প্রবল ধর্মানুরাগী ও তার ব্যাটের পেছন দিকে একটি ঈগলের প্রতীক ব্যবহার করেন তিনি, যেটি মূলত তুলে ধরে বাইবেলের একটি উক্তিকে। আইসিসির অনুমতি নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে এই স্টিকার ব্যবহার করছেন তিনি।
লাবুশেন পারলে খাজা কেন পারবেন না, এই প্রশ্নই তুলেছেন প্যাট কামিন্স। মেলবোর্নে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক বলেন, খাজার অবস্থানকে সমর্থন করেন দলের সবাই।
“সত্যি বলতে, কোনো পার্থক্য দেখছি না (খাজা ও লাবুশেনের বার্তায়)… (খাজার) আবেদনের বিস্তারিত সবকিছু আমি জানি না। তবে আমার তো মনে হয়, এটি একদমই সাধারণ, একটি ঘুঘু। আমরা সত্যিই উজির (খাজা) পাশে আছি। নিজের বিশ্বাসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে সে এবং সেটা বেশ সম্মানজনকভাবেই তুলে ধরেছে সে।”
“অবশ্যই প্রতিটি জীবনই সমান মূল্যবান এবং এখানে আক্রমণাত্মক কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। এই ঘুঘু নিয়েও একই কথা বলব আমি। উজি (খাজা) এমনই… যেভাবে সে সবকিছু তুলে ধরেছে, অবশ্যই মাথা উঁচু রাখতে পারে সে। তবে আইন তো আইনই এবং আইসিসি বলেছে যে, তারা অনুমতি দিচ্ছে না। তারাই আইন তৈরি করে এবং তা মেনে নিতেই হবে আমাদের।”
আইসিসির এই বাধা দেওয়া নিয়ে পার্থ টেস্ট থেকেই ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এখন তা উচ্চকিত হয়েছে আরও। বরাবরই এসব ক্ষেত্র সরব সাবেক ক্যারিবিয়ান ফাস্ট বোলার ও ধারাভাষ্যকার মাইকেল হোল্ডিং উইকেন্ড অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকায় লেখা কলামে কলামে কাঠগড়ায় তুলেছেন বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে।
“অন্য বেশির ভাগ সংগঠন যদি বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের আচরণ ও অবস্থান দিয়ে ধারাবাহিকতা ফুটিয়ে তুলতে না পারে, তাহলে আমি বিস্মিত হব। কিন্তু তাদের (আইসিসি) ক্ষেত্রে নয়। আরও একবার তারা তাদের ভণ্ডামি এবং সংগঠন হিসেব নৈতিকতার ঘাটতি তুলে ধরল।”
ঘুঘুর প্রতীকের আগে পার্থে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে বিশেষ বার্তা সম্বলিত কেডস পরে খেলতে চেয়েছিলেন খাজা। তার কেডসে লেখা ছিল, ‘স্বাধীনতা একটি মানবাধিকার’ ও ‘প্রতিটিই জীবনই সমান মূল্যবান।’ কিন্তু এই কেডস পরে অনুশীলন করলেও আইসিসির পোশাক আইনের পরিপন্থী বলে ম্যাচে তা ব্যবহারের অনুমতি পাননি অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার।
ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসন ও মানবিক সঙ্কট নিয়েই খাজার এই বার্তা ছিল বলে ধারণা করা হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটি নিয়ে বেশ সোচ্চার ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার।
আইসিসির আইনে আছে, রাজনৈতিক কোনো বার্তা পোশাকে প্রকাশ করা যাবে না। খাজা যদিও পরে ভিডিও বার্তায় দাবি করেন, কোনো রাজনৈতিক বার্তা তার ছিল না, বরং তিনি অবস্থান নিয়েছিলেন মানবাধিকারের পক্ষে। সেই সময় লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।
পরে পার্থে তিনি খেলতে নামেন বাহুতে কালো ফিতা বেঁধে। এটি নিয়েও আইসিসি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে পোশাক ও সরঞ্জাম আইনের ‘এফ’ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে।
খাজা তখন বলেন, তিনি কালো ফিতা বেঁধেছিলেন ‘ব্যক্তিগত শোকের’ কারণে এবং আইসিসির অভিযোগের বিরুদ্ধেও লড়াইয়ের ঘোষণা দেন তিনি। ৩৭ বছর বয়সী ওপেনার তখন এটাও বলেছিলেন, আইসিসি তাদের নিজেদের আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রেই ধারাবাহিক নয়।