ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞ লিজ রাইয়ানের বন্ধু নতুন চাকরি পেলেন। কিন্ত ছয় মাসের মধ্যে ছেড়ে দিলেন। জানালেন, তার বসের রীতিমতো মানসিক সমস্যা রয়েছে। এটা যদি আগে বুঝতে পারতেন, তাহলে চাকরিতেই ঢুকতেন না।
এ বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে এসেছেন লিজ। আসলে এ ধরনের বসকে বিষাক্ত বস বলা যায়। এদের আগে থেকে চিহ্নিত করতে পারলে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হয় না। অথচ প্রথম দিকে লিজের বন্ধুর বসকে মোটেই তা মন হয়নি। অন্তত বন্ধু ভাষ্যে তাই বোঝা যায়। বস তাকে কাজ শিখিয়ে দিয়ে আরো দক্ষ কর্মীতে পরিণত করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বসের এমন আন্তরিকতায় অভিভূত হয়ে যান লিজের বন্ধু। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বসের বিরক্তিকর যন্ত্রণা ক্রমেই অসহনী হয়ে উঠতে থাকে তার কাছে। একটা পর্যায়ে মনের মতো চাকরিটা ছাড়তে বাধ্য হন।
লিজের মতে, আগে থেকেই এ ধরনের বিষাক্ত বসকে চিহ্নিত করা যায়। এখানে ১০টি লক্ষণের কথা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞ।
১. ইন্টারভিউয়ে আপনার বস প্রচুর সময় ব্যয় করেন নিজের বিষয়ে বলতে গিয়ে। হয়তো শ্রোতা হিসাবে আপনি ভালো। কিন্তু ভালো শ্রোতা নিশ্চয়ই চান না বস? তার এ যন্ত্রণাদায়ক অভ্যাস ভবিষ্যতে আরো পেরেশানি দেবে।
২. আগের চাকরিতে কিভাবে কাজ করতেন তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইবেন বস। কিন্তু তার প্রতি মন থাকবে না তার। মানুষ হিসাবে আপনি কেমন তা হবে বসের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। আপনি কোথায় বড় হয়েছেন, ক্যারিয়ার হিসাবে কেন এই পথ বেছে নিয়েছেন, লক্ষ্য পূরণে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন করতে থাকবেন।
৩. ইন্টারভিউয়ে একাধিক উপদেশ দিতে থাকবেন তিনি। এমনকি বাড়িতে ফেরার পর তার চাহিদা আরো বেড়ে যাবে। পরীক্ষার অংশ হিসাকে কোনো প্রজেক্ট তৈরি করা বা মার্কেটিংয়ের নয়া কোনো পন্থা ইত্যাদি নিয়ে আপনার কাছ থেকে লিখিত চাইবেন।
৪. চাকরি দেওয়ার আগেই আপনার মধ্যে কি কি সমস্যা রয়েছে তা নিয়ে আলাপ করবনে বস।
৫. অতীতে কোন কোন কর্মীকে কেন ছাঁটাই করেছেন তার বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরবেন। এটা খুব বাজে একটা লক্ষণ। এখানে সুযোগ বলতে কিছুই নেন বলে ধরে নিতে পারেন। আপনার মনে চাকরির আগেই ভীতি সঞ্চার করছেন তিনি।
৬. আপনার ইন্টারভিউয়ের গোটা সময় করপোরেট রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করে যাবেন বস। এমনটা ঘটেছিল মিরান্ডার ক্ষেত্রে। ইন্টারভিউয়ে তার বস তাকে আটকে রাখলেন কয়েক ঘণ্টা। প্রশ্ন করলেন, আপনি আমাকে এক বছরের মধ্যে পরিচালনা পর্ষদের পৌঁছতে সহায়তা করতে পারবেন? এই অদ্ভুত প্রশ্নের জবাবে মিরান্ডা বললেন, আমি তা এখোনি বলতে পারছি না। দ্বিতীয়বার এই অফিসে আসা উচিত নয়।
৭. আপনার বস ইন্টারভিউয়ের অর্ধেক সময় ধরে তার ও তার বসের মধ্যকার সমস্যা নিয়ে আলাপ করেন। এমনকি পরামর্শ চেয়ে বসেন প্রার্থীর কাছ থেকে। এমন বস সত্যিই বিরক্তিকর এবং বিপজ্জনক।
৮. বস কতটা স্মার্ট এবং করিৎকর্মা তারই ফিরিস্তি দিতে থাকেন আপনার কাছে। বিশেষজ্ঞের মতে, বস এ ক্ষেত্রে মোটেই নিরাপদ নন। তাকে এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। এমন লক্ষণ প্রকাশ পেলে তা বুঝে নিতে ভুল করবেন না।
৯. আপনার রিজ্যুমির নানা খুঁটিনাটি নিয়ে নানা প্রশ্ন করতে থাকেন বস। বিভিন্ন ভুল তুলে ধরেন। এ প্রতিষ্ঠানে কি কাজ করবেন ইত্যাদি বিষয়ে তিনি কোনো কথাই বলতে চাইবেন না। আপনার কর্মদক্ষতা বিষয়ে কোনো বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ প্রশ্নই করতে পারবেন না। এ ধরনের বসের অধীনে কাজ করা আপনার জন্যে বিপজ্জনক বটে।
১০. ইন্টারভিউয়ের একটি বিষয় বার বার তুলে আনবেন বস। আপনাকে জানানো হবে, এই পদের জন্যে অসংখ্য দক্ষ প্রার্থী আবেদন করেছেন। এদের মধ্যে আপনি একজন ভাগ্যবান বা ভাগ্যবতী যে ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন। এখান থেকে দৌড়ে পালাতে পরামর্শ দেন রাইয়ান। আসলে এসব বলে আপনি যে অনুগত ও কৃতজ্ঞ থাকবেন তা নিশ্চিত করতে চান বস।
কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলে আপনাকে এসব লক্ষণ নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। ওদের 'না' বলে দিতে মনে অস্বস্তি রাখবেন না। বার বার মনে হতে পারে যে, হয়তো ভুল হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান বা বস সবই ঠিক আছে। আসলে সর্বনাশ ঘটে যাবে যদি ভুল করেই ফেলেন। আপনার একটা চারকি দরকার। আর নতুন চাকরি পাওয়ার তাগাদা থেকেই এসব লক্ষণ হয়তো চোখে পড়ে না। তবে দৃষ্টি পরিষ্কার রাখুন এবং বিপদ মনে হলে অনায়াসে ফিরে আসুন। সূত্র : ফোর্বস