ক্রিকেট থেকে আজীবন নিষেধাজ্ঞার মুখে সৈকত

খেলাধুলার বিবিধ August 28, 2018 1,298
ক্রিকেট থেকে আজীবন নিষেধাজ্ঞার মুখে সৈকত

একদিকে স্ত্রীর যৌতুকের মামলা, অন্যদিকে বিসিবিও তলব করেছে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে। ক্রিকেট থেকে আজীবন নিষেধাজ্ঞার মুখে সৈকত। তাই ক্রিকেট পাড়া থেকে শুরু করে সর্বত্র চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এখন প্রশ্ন একটাই- এখন কী হবে এই তরুণ ক্রিকেটারের! মামলার কারণে তিনি গ্রেপ্তার হতে পারেন- তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই গ্রেপ্তার এড়াতে এরই মধ্যে জামিন আবেদন করেছেন। অন্যদিকে বিসিবি’র সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন সৈকতের সঙ্গে আলোচনা করবেন তারা। শঙ্কা রয়েছে সৈকতের বক্তব্য মনোঃপুত না হলে বাদ পড়তে পারেন এশিয়া কাপের দল থেকে। এমনকি সাময়িক নিষিদ্ধও হতে পারেন তিনি। এ বিষয়ে সিইও বলেন, ‘মোসাদ্দেকের ব্যাপারটা যেটা দেখছি তার স্ত্রী মামলা করেছেন, যেহেতু এটা আদালতে চলে গেছে, আদালতেই নিষ্পত্তি হোক। আর আমরা বিষয়গুলোকে আমাদের মতো করে দেখবো। খুব শিগগিরই বসবো, সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়দের ডাকা হবে। তাদের বক্তব্য শুনবো।’


একের পর এক ক্রিকেটারকে নিয়ে এমন নেতিবাচক সংবাদে বেশ বিব্রত বিসিবি। যদিও নাসির হোসেন ও সাব্বির রহমানের সাম্প্রতিক ঘটনার মতো নয় মোসাদ্দেক হোসেনের বিষয়টি। এ বিষয়ে সিইও বলেন, ‘এটা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত, পারিবারিক ব্যাপার। অভিভাবক হিসেবে আমাদের যেটা করণীয় আমরা করবো। বোর্ডের অবস্থান এসব ব্যাপারে কঠোর হবে এইটুকু বলতে পারি। বোর্ড সভাপতি দেশের বাইরে আছেন। উনি যাওয়ার আগে এসব নিয়ে আলোচনা করেছেন। মোসাদ্দেকের ইস্যু আসার আগে অন্য বিষয় (নাসির ও সাব্বির) ছিল, যেগুলো নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে যেটা আপনারা শিগগিরই জানতে পারবেন।’


অন্যদিকে জাতীয় দলের এক সাবেক অধিনায়ক শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এসব ঘটনাতে হারিয়ে যেতে পারে ২২ বছর বয়সের এ প্রতিভাবান ক্রিকেটার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘ওরা সবাই প্রাপ্ত বয়স্ক তাই ভালো-মন্দ সবাই বোঝে। আমার অভিজ্ঞতাতে যা দেখেছি তাতে এমন পরিস্থিতিতে পড়ে অনেক ক্রিকেটারই হারিয়ে গেছে। মোসাদ্দেককে দেখেন এক সময় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও ওর বড় বড় সেঞ্চুরি থাকতো এখন কিন্তু তা হচ্ছে না। তার মানে ওর ব্যক্তিগত জীবনের প্রভাব পড়েছে তার পারফরম্যান্সে।’


এশিয়া কাপের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে গতকাল। ৩১ সদস্যের দলে আছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও। তাই মামলা মাথায় নিয়ে তাকে অনুশীলনে আসতে হয়। তার এক ফাঁকে মানবজমিন-এর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন নিজের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। গর্ভের সন্তান নষ্ট করা, অন্য মেয়েতে আসক্ত হওয়া, যৌতুক চাওয়া শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করাসহ স্ত্রীর অভিযোগে তিনি বলেন, ‘আমি খুব অবাক হচ্ছি এসব কথা শুনে। বিশেষ করে সন্তান নষ্ট করার বিষয়টি আমি মানতে পারছি না। ওর গর্ভে যখন সন্তান তখন আমি দেরাদুনে খেলতে গেছি। সেখান থেকে শুনেছি মিসকারেজ হয়েছে। আমিতো জাদুকর নই যে, ভারত থেকে উড়ে এসে জোর করে সন্তান নষ্ট করবো। হ্যাঁ, প্রেম করে বিয়ে করেছি। এখন মতের সঙ্গে মিলছে না। আমি তাই আপসেই সব শেষ করতে চেয়েছি। ডিভোর্স দিয়েছি, এমনকি কাবিননামা ও আইন অনুসারে সব খরচ দিতেও রাজি আছি। তাহলে কেন এমন মিথ্যা মামলা! বেশ কিছুদিন ধরে একটি বিষয় দেখছি কিছু হলেই মেয়েরা মামলা করে। এর মধ্যে অনেকগুলো মিথ্যাও প্রমাণ হয়েছে। আমার একটাই প্রশ্ন, ‘মেয়েরা কি মিথ্যা বলে না?’ শুধুকি ছেলেরা খারাপ! এখন আমি মুক্তি চাই। ওরা মমলা করেছে তা আমি আইনিভাবেই মোকাবিলা করবো। নতুন করে আর কোনো মামলা করে আমি ঝামেলা বাড়াতে চাই না। আমি শুধু মুক্তি চাই।’


বর্তমানে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের বয়স ২২ বছর। কাবিননামার অনুসারে তিনি সামিয়া শারমিনকে বিয়ে করেছিলেন ২০১২ সালে। সেই হিসেবে সৈকত বিয়ে করেছিলেন মাত্র ১৬ বছর বয়সে। কিন্তু বাংলাদেশের আইনে মেয়েদের ১৮ ও ছেলেদের ২১ না হলে বিয়ে পড়াতে পারেন না কাজী। তাহলে কি বয়স চুরি করে এ বিয়ে হয়েছিল! যদিও মোসাদ্দেক ও তার স্ত্রীর পরিবারের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে যেহেতু বিষয়টি এখন আইনি প্রক্রিয়াতে আছে তাই বয়স লুকানোর বিষয়টিও আলোচনাতে আসতে পারে।