বাংলাদেশে ডাক্তারি পড়তে এসে সম্ভ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন নেপালি ছাত্রীরা

আন্তর্জাতিক July 24, 2018 1,696
বাংলাদেশে ডাক্তারি পড়তে এসে সম্ভ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন নেপালি ছাত্রীরা

বাংলাদেশে ডাক্তারি পড়তে এসে নেপালি ছাত্রীরা তাদের ‘সম্ভ্রম বিক্রি’ করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে গুরুতর অভিযোগ করেছেন নেপালের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী শের বাহাদুর তামাং।


গত ২০ জুলাই কাঠমান্ডুর চাবাহিলে প্রাজিক্স ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি নামক একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সামনে নেপালের মন্ত্রী এ অভিযোগ করেন। তবে, তিনি এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য বা পরিসংখ্যান দেন নি।


শের বাহাদুর তামাং দাবি করেন, নেপালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেডিকেল কলেজ না থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থী এমবিবিএস ডিগ্রি নিতে বিদেশে যায়। সেখানে কিছু বিষয়ে তারা সমঝোতা করতে বাধ্য হয়। এ রকম পরিস্থিতিতেও কিছু অভিজাত পেশাজীবী দেশে নতুন মেডিকেল কলেজ খোলার বিরোধীতা করেন। তারা চান না এ পেশায় অন্য আরও লোকজন আসুক।


মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে নেপালের জাতীয় দৈনিক ‘দি হিমালয়ান’ গত ২২ জুলাই (রবিবার) এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দায়িত্বশীল একজন মন্ত্রীর এ ধরনের অভিযোগের নিন্দা করে অনেকেই বলছেন, এ ধরনের অভিযোগ বাংলাদেশে অধ্যয়নরত নেপালি শিক্ষার্থীদের সুনাম ব্যাহত করবে। এ অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন অনেকে।


এর আগে নেপালের বি অ্যান্ড সি মেডিকেল কলেজের নির্বাহী পরিচালক দুর্গা প্রসাই নতুন মেডিকেল কলেজ স্থাপনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে একই ধরনের অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করতে গিয়ে ও এমবিবিএস সার্টিফিকেট পেতে নেপালি শিক্ষার্থীরা ধর্ষিত হচ্ছে কি-না (সেক্সুয়েলি এক্সপ্লোটেড) তা গণমাধ্যম কর্মীদের অনুসন্ধান করা উচিত বলে মন্তব্য করেন।


বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে তিন শতাধিক নেপালি ছাত্রী অধ্যয়ন করছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রশীদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। তবে নেপালের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী যদি এমনটি বলে থাকেন তবে তা গোটা বাংলাদেশের জন্যই দুঃখজনক।’


ওদিকে বিরূপ এই মন্তব্য করার পর চাপের মুখে পদত্যাগ করেছেন নেপালের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী শের বাহাদুর তামাং।


তার এই মন্তব্য নেপালে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করে। বিশেষ করে বাংলাদেশে পড়তে যাওয়া নেপালি শিক্ষার্থীরা মন্ত্রীর মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানায়।


নেপালি শিক্ষার্থীরা বলেন, কোন ধরনের তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই মন্ত্রী তাদের ব্যাপারে মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন।


‘তিনি কি কখনো বাংলাদেশে পড়তে যাওয়া নারী শিক্ষার্থীদের কাছে এব্যাপারে খোঁজ নিয়েছিলেন? আমরা সেখানে কতো কষ্ট করে লেখাপড়া করি তার তিনি কিছুই জানেন না,’ বলেন ড. রোজি মানান্ধার, যিনি বাংলাদেশ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে সম্প্রতি নেপালে ফিরে গেছেন।


‘কোন ধরনের প্রমাণ ছাড়াই তিনি একথা বলেছেন। কঠোর পরিশ্রম করেই আমি আমার সার্টিফিকেট পেয়েছি,’ তিনি বলেন।


তবে, ওই অনুষ্ঠানেই মন্ত্রী তামাং বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে ফিরে আসা কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তিনি এধরনের অভিযোগের কথা শুনেছেন। তবে তিনি এও বলেছেন যে এসব অভিযোগের সত্যতা তিনি নিজে কখনো যাচাই করে দেখেন নি।


বিবিসি জানিয়েছে, নেপালি ওই মন্ত্রী প্রথমে পদত্যাগ করতে চান নি। কিন্তু পরে তার দল ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপালের ভেতরেই তার উপর প্রচণ্ড রকমের চাপ তৈরি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে এবং একারণেই শেষ পর্যন্ত তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।


মন্ত্রী তামাং এর এই মন্তব্যের কারণে নেপালের সোশাল মিডিয়াতে তার তীব্র সমালোচনা হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অনেকেই লিঙ্গ বৈষম্যের অভিযোগ তুলে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।


বিবিসির নেপালি বিভাগকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী তার এই মন্তব্যের জন্যে ক্ষমাও চেয়েছেন।


সিলেটের একটি মেডিকেল কলেজে পঞ্চম বর্ষে পড়ছেন এমন একজন নেপালি শিক্ষার্থী সাব্বু পোখারেল বলেছেন, নেপাল থেকে বাংলাদেশে পড়তে যাওয়া নারী শিক্ষার্থীরা কোন ধরনের চাপের মধ্যে লেখাপড়া করে না।


‘মন্ত্রীর একথা শোনার পর আমার বাবা মা আমাকে ফোন করে এখানকার অবস্থা জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখানকার অবস্থা মোটেও সেরকম কিছু নয়। বাংলাদেশে আমরা খুব নিরাপদে আছি,’ বলেন পোখারেল।