রোজাদারদের জন্য জরুরী কিছু পরামর্শ

লাইফ স্টাইল May 19, 2018 2,285
রোজাদারদের জন্য জরুরী কিছু পরামর্শ

রমজান মাসে ধর্মীয় বিধি বিধানের পাশাপাশি দৈনন্দিন কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য স্বাস্থ্য ঠিক রাখা খুব জরুরী। তাই পুষ্টিবিদরা বলছেন দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার পর সেহরি ও ইফতারে খাদ্য দ্রব্য বাছাই করে খাওয়াটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক গোলাম মাওলা ও পুষ্টিবিদ অধ্যাপক নাজমা শাহীন রোজাদারদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন যা নিন্মে দেওয়া হলঃ


তাঁরা উভ্যেই বলছেন, রোজার জন্য আলাদা ডায়েটের দরকার নাই। পানি জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। বিশুদ্ধ পানি ও ফলের রসই বেশি কাজে লাগে ।


ইফতার কোথা থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ঘরে তৈরি খাবারই সবচেয়ে নিরাপদ। বেশী তেলে ভাজা বাজারের ইফতার শরীরের জন্য ভাল নয়।’


গোলাম মাওলা ও নাজমা শাহীন দুজনই বলেন তৈলাক্ত খাবার, ভাজা পোড়া বর্জন করাই ভালো। বরং ফল ও খেজুর শরীরে পুষ্টি ও শক্তি যোগায়।


ভাজাপোড়া খাবার নয়ঃ


মাছ ডাল ভাত আদর্শ খাবার। ভোররাতে গরুর মাংস এড়িয়ে মুরগী খাওয়া ভাল। তবে শাক সবজি ও ডাল শরীরের জন্য ভালো হবে। ব্যক্তিকেই বুঝতে হবে কোনটি তার শরীরের জন্য ভালো হচ্ছেনা। যেটি ক্ষতিকর মনে হবে তা না খাওয়াই ভাল।


খাদ্য তালিকায় কী থাকবেঃ


পানি, ফল, চিড়া, রুটি, ভাত, সবজি, ডাল, ডিম, হালকা খিচুড়ি খাওয়া যেতে পারে। মানসম্পন্ন হালিম শরীরের জন্য উপকারী হবে। এটি শক্তি বাড়ায়।


সতর্ক হয়ে খেতে হবেঃ


বিরিয়ানি, তেহারির মতো খাবারকে ভারী খাবার হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। মাঝে মধ্যে ইফতারির পর হালকা কম তেলযুক্ত তেহারি খাওয়া মন্দ না।


নিয়মিত খাবারকে গুরুত্ব দিতে হবেঃ


সাধারণত একজন মানুষ নিয়মিত যেসব খাবার খান রোজার সময়েই সেগুলোই তার জন্য যথেষ্ট। তবে সারাদিন রোজা পালন শেষে পানি খেতে হবে পর্যাপ্ত। আর বেশি গরম পড়লে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।


শারীরিক পরিশ্রম কমানোঃ


রোজার সময় অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম সমস্যার কারণ হতে পারে। একেবারে অলস থাকাও যেমন ক্ষতিকর তেমনি অতিরিক্ত পরিশ্রমও ক্ষতিকর হবে। তাই এসব বিষয়ে সাবধান হতে হবে।


সহজে যাতে হজম হয়ঃ


রোজা পালনকারী ব্যক্তিকে বুঝতে হবে কোন খাবার গুলো তার সহজে হজম হয়। এসব খাবারকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যেসব খাবার হজমে সমস্যা করে সেগুলো না খাওয়াই ভালো। কারণ রোজার সময় শরীরের এনজাইম যা হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় সেটি বন্ধ থাকে।


একসাথে বেশি খাবার থেকে বিরত থাকাঃ


সারাদিন রোজা পালনের পর একবারে অনেক খাবার খেলে সেটি ক্ষতিকর হতে পারে। তাই কোনভাবেই অতিরিক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা। বরং ফল ও সবজি দিয়ে পরিমাণ মতো ইফতার করা ভাল।


খাবার কিভাবে খাবেনঃ


খাবার আস্তে ধীরে ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে। ইফতারির শুরুতেই পানি শরীরের জন্য উপকারী। পাশাপাশি খেজুর শক্তি যোগাতে ভূমিকা রাখে।


স্যুপ খেতে পারেনঃ


রোজার সময় সারাদিন পর স্যুপ শরীরকে সতেজ করতে পারে এবং খাবার হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখতেও এটি কাজে লাগে। ফুলকপির স্যুপ বা লেটুস পাতার স্যুপ অনেক উপকারী। লেটুস পাতায় কোন গ্যাস হয়না। আর গাজর খেলে সেটি হালুয়া বানিয়ে অল্প খাওয়া যেতে পারে।


খাবার ও জীবনধারা ঠিক রাখাঃ


শুধু খাবারই নয়, বরং এর পাশাপাশি প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম। আর কঠিন শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ইফতারের পর বা সেহেরীর পর ধূমপান থেকেও বিরত থাকা উচিত।


যারা ঔষধ সেবন করেন তারা রোজা করবেন কিভাবে?


রমজানে সাধারণত কিছু সমস্যা হয় যার মধ্যে রয়েছে দুর্বলতা, ক্লান্তি কিংবা অ্যাসিটিডি। আর যারা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা কিডনি জটিলতায় ভুগছেন তাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। এসব বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রোজা রেখেও ঔষধ সেবন করা সম্ভব। কারণ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ইফতার থেকে সেহরির সময়ে ঔষধ সেবন করা যায়।


ব্যায়াম করবেন কখনঃ


অনেকেই নিয়মিত শরীর চর্চা করেন। কিন্তু রোজার সময়ে অন্য সময়ের মতো ব্যায়াম করা সম্ভব হয়না। কোন ভাবেই রোজা করে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা ঠিক হবেনা। তবে শরীর সায় দিলে হালকা শরীর চর্চা কেউ চাইলে সন্ধ্যার পর করতে পারে, যদিও শরীরের ওপর চাপ পড়ে এমন কিছু করা যাবেনা।


তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হেলথ ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ ইউনুস বলছেন যারা রোজা করবেন তাদের জন্য নামাজ বিশেষ করে ইফতারির পর রাতে তারাবির নামাজ নিয়মিত আদায় করাটাই বড় ব্যায়াম হতে পারে। এছাড়া ইফতারি বা রাতের খাবারের পর হাঁটাচলাও ব্যায়াম হিসেবে ভালো হবে।


ব্যায়াম প্রশিক্ষকের অভিমতঃ


ব্যায়ামের প্রশিক্ষক মিন্টু আকরাম বলছেন, রোজাদারদের ভারী উপকরণ ব্যবহার করাটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ব্যায়ামের সময়ও কমিয়ে আনতে হবে। রোজা করলে ইফতারির পর অন্তত আধাঘণ্টা বিরতি দিয়ে হালকা ওয়ার্ম আপ বা সকালে কিছুটা ওয়ার্মআপ বা সকালে কিছুটা ওয়ার্ম আপ করা যেতে পারে ফিটনেস ধরে রাখার স্বার্থে। ব্যায়ামের ক্ষেত্রে নিজ নিজ প্রশিক্ষকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।


সুত্রঃ বিবিসি