কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে খাবারের তালিকায় রাখুন এই সব খাবার

সাস্থ্যকথা/হেলথ-টিপস September 17, 2017 901
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে খাবারের তালিকায় রাখুন এই সব খাবার

মানুষের অন্ত্রের অভ্যন্তরীণ গতিপ্রকৃতি আলাদা হওয়ার কারণে একেকজনের কোষ্ঠ বা মলের ধরন একেক রকম। তবে মলত্যাগের সময় কষ্ট বা মল শক্ত হওয়ার কারণে মলদ্বারে ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা হলে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন।


যদি পেট পরিষ্কার না থাকে তাহলে অস্বস্তির শেষ থাকে না। যাদের এরকম সমস্যা রয়েছে তাদের বেশি বেশি আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।


যে সকল কারনে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে

কোষ্ঠকাঠিন্য এমন এক অবস্থা যখন একজন ব্যক্তি সহজে মলত্যাগ করতে সক্ষম হন না। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে মলের সাথে রক্তপাত, পাই‌লস, আলসার, পেটে ব্যথা, এনালফিসার এবং ফিসটুলার মতো জটিল রোগও হতে পারে।আবার স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে। নিম্নে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কিছু কারন বর্ণনা করা হলঃ


শাকসবজি ও ফলমূল এবং আঁশজাতীয় খাবার কম খেলে।

ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। আবার, অ্যাসপিরিন এবং ইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ, অ্যান্টাসিড, ভিটামিন জাতীয় ওষুধ যেমন- ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদি ওষুধ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে, প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে।


কায়িক পরিশ্রমের অভাব, হাঁটা-চলা কিংবা ব্যায়াম একেবারেই না করলে এই সমস্যা হতে পারে।


নিয়মিত মলের বেগ চেপে রাখলে এবং বিষয়টি যদি অভ্যাসে পরিণত হয় তবে এ থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।


থাইরয়েডগ্রন্থির কারণে অনেক ক্ষেত্রে শরীরের বিপাকক্ষমতা কমে যেতে পারে। ফলে বুকজ্বালা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।


দুগ্ধজাতীয় খাবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডায়রিয়া কিংবা মলত্যাগের সমস্যার কারণ হতে পারে।


অবসাদ কিংবা বিষণ্ণতা কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি অন্যতম কারণ। মানসিক সমস্যার কারণে অনেক সময় খাদ্য পরিপাকে সমস্যা হয়। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।


প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমানে পান করলে এই সমস্যা হতে পারে।


অনেক সময় গর্ভধারণের ফলে এই সমস্যা হতে পারে।


কয়েকদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার সাথে গর্ভধারণের লক্ষণ প্রকাশ পেলে, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।


কিছু রোগের কারনে, যেমন- অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, মস্তিষ্কে টিউমার কিংবা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি আবার দীর্ঘদিন অসুস্থতার কারণে বিছানায় শুয়ে থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।


পেট পরিষ্কার রাখতে ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা এড়াতে এ খাবারগুলো উপকারি।


পেট পরিষ্কার রাখতে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এমন খাবার সম্পর্কে জেনে নিই-


কমলা : ভিটামিন সি’তে ভরপুর একটি কমলায় প্রায় চারগ্রাম আঁশ থাকে। এছাড়াও কমলায় থাকা ফ্লাভানল নামক উপাদান মল নরম করতে সাহায্য করে।


আপেল : আঁশ জাতীয় খাবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। একটি আপেলে সাড়ে চার গ্রাম আঁশ থাকে। এটি নিয়মিত খেলে এ সমস্যা দূর করা সম্ভব।


ভুট্টার খই : প্রতি এক কাপ পপকর্নে প্রায় এক গ্রাম আঁশ ও শাঁস থাকে। কোনোরকম স্বাদ যুক্ত না এতে ক্যালরির মাত্রাও কম থাকে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা এড়াতে পপকর্ন বেশ উপকারি।


ওটস : ওটস পেট পরিষ্কার রাখতে কাজ করে। ছোট এক কাপ ওটসে দুই গ্রাম দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় আঁশ থাকে। এটা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধানও করে।


অ্যালোভেরা : ত্বক ও চুলের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা জানি। কিন্ত এটা যে অন্ত্রেরও উপকারী তা অনেকেই জানি না। তাই অন্ত্র পরিষ্কারক খাবার হিসেবে অ্যালোভেরা বেছে নিতে পারেন।


আদা চা : আদা চা খাবার তাড়াতাড়ি পাচন করতে সাহায্য করে।


মিন্ট চা : মেন্থল বা পিপারমেন্ট দেয়া চা শরীরের পাচনতন্ত্রের পেশিগুলোকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। রোজ সকালে এক কাপ করে মিন্ট চা কিন্তু আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে পারে।


আলুবোখারা : আলুবোখারাতে প্রচুর ফাইবার থাকায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আপনাকে উপশম দেবে।


ডুমুর : কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ডুমুরেরও জুড়ি মেলা ভার।


পানি : সারা দিনে প্রচুর পরিমাণ পানি খেতে হবে। কম পানি খাওয়ার জন্য অনেক সময় শরীর শুষ্ক হয়ে যায়। ফলে এই সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে।


হেলদি ফ্যাট : বাদাম, ওলিভ অয়েল, অ্যাভোকেডোর মতো স্বাস্থ্যকর ফল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে।


গুড় : প্রতিদিন সকালে এক টেবল-চামচ করে আখ বা খেজুরের গুড় কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে। কারণ গুড়ে নানা ধরনের খনিজ পদার্থ থাকে। তার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য ম্যাগনেসিয়াম।


ইসবগুল: ইসবগুলে থাকে কিছু অদ্রবণীয় ও দ্রবণীয় খাদ্যআঁশের চমৎকার সংমিশ্রণ যা কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য খুব ভালো ঘরোয়া উপায় হিসেবে কাজ করে।এটি পাকস্থলীতে গিয়ে ফুলে ভেতরের সব বর্জ্য পদার্থ বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে।


প্রাকৃতিকভাবে জলগ্রাহী হওয়ার কারনে পরিপাকতন্ত্র থেকে পানি গ্রহণ করে মলের ঘনত্বকে বাড়িয়ে দিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ২ চামচ ইসবগুল এক গ্লাস কুসুম গরম দুধের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন ঘুমাতে যাবার আগে পান করে নিন।