জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের উত্তর রেঞ্জের পঞ্চাশ ফুট বিটের জঙ্গলে জোরপূর্বক যৌনসঙ্গম করায় মৃত্যু হলো এক অপ্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী গন্ডারের। সদ্য যৌবনে পা রেখেছিলো এ মাদি গন্ডার। সঙ্গমের আদবকায়দার কিছুই রপ্ত করতে পারেনি সে। কিন্তু তাতে ‘মাদা’দের কী আসে যায়।
প্রকৃতির নিয়মে ওই মাদির দিকে আকর্ষিত হয়ে পড়ে কমপক্ষে ছয়-ছয়টি গন্ডার। প্রাথমিক অবস্থায় একত্রিত হয়ে বন্য ভঙ্গিতে ফুঁসলাতে শুরু করে ওই গন্ডারটিকে। কিন্তু কোনো ভাবেই সঙ্গমে অনভিজ্ঞ ওই স্ত্রী গন্ডারকে বাগে আনতে না পেরে প্রবল আক্রোশে তার উপর চড়াও হয় ওই ছয় মাদা। টানা ছয় ঘণ্টা ধরে চলে নৃশংস অত্যাচার।
সারা দেহে মারাত্মক ক্ষত নিয়ে একসময় রক্তাক্ত অবস্থায় জঙ্গলের ভিতরে লুটিয়ে পড়ে সে। ঘটনার খবর পেয়ে বনকর্মীরা শূন্যে গুলি ছুড়ে নাছোড় মাদাদের তাড়াতে সক্ষম হলেও ততক্ষণে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গিয়েছিল। দেহের বিভিন্ন অংশে তৈরি হওয়া মারাত্মক ক্ষতগুলি থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হয় ওই মাদি গন্ডারটির।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের উত্তর রেঞ্জের পঞ্চাশ ফুট বিটের জঙ্গলের গভীর থেকে মাদি গন্ডারটির নিথর দেহ উদ্ধার করেন বনকর্মীরা। সাধারণত প্রজননের মরশুমে সঙ্গিনী দখলের লড়াইয়ে নেমে পুরুষ গন্ডারের মৃত্যুর ঘটনা জঙ্গলের গভীরে ঘটার বহু নজির রয়েছে। কিন্তু সঙ্গমে অরাজি কোনও মাদি গন্ডারকে এমন নৃশংস ভাবে নিপীড়নের নজির খুব একটা নেই বলে দাবি বনকর্তাদের।
ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে যে দেহের বিভিন্ন অংশে মারাত্মক আঘাত আর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই গন্ডারটির মৃত্যু হয়েছে। গন্ডারটির শৃঙ্গ অক্ষত অবস্থায় মিলেছে বলে জানিয়েছেন জলদাপাড়া বন বিভাগের ডিএফও কুমার বিমল।
এশিয়ান রাইনো গ্রুপের চেয়ারম্যান বিভব তালুকদার জানিয়েছেন, ‘প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে প্রত্যেকটি পুরুষ গন্ডার পিছু কমপক্ষে তিনটি মাদি গন্ডার থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ইতিপূর্বেই সমীক্ষার মাধ্যমে আমরা পশ্চিমবঙ্গের বনকর্তাদের জানিয়ে দিয়েছি যে বর্তমানে জলদাপাড়ায় পুরুষ ও মাদি গন্ডারের সমানুপাতিক হার ১০:১ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই কারণেই ওই জঙ্গলে এই ধরনের নৃশংসতার প্রবণতা দেখা দিতে শুরু করেছে পুরুষ গন্ডারদের মধ্যে। বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের। অবিলম্বে অন্য রাজ্যের সঙ্গে বিনিময় প্রথার মাধ্যমে পুরুষ ও মাদি গন্ডারের সমানুপাতিক হার ঠিক না করতে পারলে জলদাপাড়ায় বিপদ আসন্ন।’
উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ শাখার প্রধান মুখ্য বনপাল উজ্জ্বল ঘোষ জানিয়েছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পটি সময়সাপেক্ষ। বেশি সময় নষ্ট করার অবকাশও নেই আমাদের হাতে। যে কায়দায় বেশ কয়েকটি পুরুষ গন্ডার কামে উত্তেজিত হয়ে মাদি গন্ডারটিকে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে তা সঙ্গিনী দখলের লড়াইয়ে পুরুষ গন্ডারদের মধ্যে ঘটতে দেখা যায়।’
সূত্রঃ ইন্টারনেট