এখন আর শুধু প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধের জন্যই সবজিভোজী হওয়ার কথা বলা হয় না। বরং সবজিভোজী হওয়ার নানাবিধ স্বাস্থ্যগত উপকারিতার জন্যই প্রচুর মানুষ এখন সবজিভোজী হচ্ছে। সবজিভোজী হওয়ার কথিত এই উপকারিতাগুলো এখন বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত। উপকারিতাগুলো হলো- দেহের শক্তি বৃদ্ধি পায়, ত্বক সজীব থাকে এবং বয়সের ছাপ পড়ে না ও চেহারার তারুণ্য ধরে রাখে।
সুপরিকল্পিত উদ্ভিদভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস হয় প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য জরুরি ভিটামিন ও খনিজ পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ। সবজিতে ক্ষতিকর চর্বি অনেক কম থাকে কিন্তু খাদ্য আঁশ বেশি থাকে। এ ছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও থাকে প্রচুর পরিমাণে।
আর এসব পুষ্টি উপাদান স্থূলতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিরোধে বেশ কার্যকর। আর পশুমাংস খাওয়া বন্ধ করে কার্বন নিঃসরণ কমানোর মাধ্যমে কেউ বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধি কমাতেও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে।
উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্য ব্যবস্থাই মানব প্রজাতিকে বাঁচিয়ে রাখার সবচেয়ে টেকসই খাদ্যাভ্যাস। আসুন জেনে নেওয়া যাক মাত্র একসপ্তাহ সবজিভোজী হলেই যে উপকারিতাগুলো দৃশ্যমান হয়ে উঠবে…
১. ওজন কমা
সবজিভোজী হলে খুব অল্প সময়ই ওজন কমার বিষয়টি নজরে পড়ে। কারণ উদ্ভিদভিত্তিক খাদ্যে পশু-ভিত্তিক খাদ্যের চেয়ে কম ক্যালরি এবং কম চর্বি থাকে। ফলে সবজিভোজীরা পরিমাণে বেশি খাবার খেলেও তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
২. শক্তি বৃদ্ধি
সবজিভোজীরা প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খান। তার মানে তারা প্রক্রিয়াজাত সুগার গ্রহণও কমিয়ে দেন। ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে গিয়ে দূর্বল হয়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটে না। সবজিভোজী হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই দৈহিক শক্তি বাড়ে চোখে পড়ার মতো।
৩. জাঙ্কফুড খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কমে
বেশি বেশি প্রক্রিয়াজাত খাবার ফলে একটা সময়ে গিয়ে ন্যূনতম প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। আর প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দেওয়ার পর দেহ প্রক্রিয়াজাত খাবারের বিষগুলো থেকে নিজেকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করতে চায়। ফলে জাঙ্কফুড খাওয়ার আর কোনো ইচ্ছাই হয়তো জাগবে না।
৪. হজমশক্তি বাড়ে
উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবারে থাকে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য আঁশ। যা দেহকে বর্জ্য নিষ্কাশন এবং হজমপ্রক্রিয়াকে পরিষ্কার করতে সহায়ক। সুতরাং আঁশ ও পানিসমৃদ্ধ এবং প্রচুর পুষ্টিউপাদানযুক্ত সবুজ শাক-সবজি এবং ফল খেলে হজম শক্তি বাড়ে।
৫. বিষমুক্তকরণ
পুরোপুরি সবজিভোজী হওয়ার ফলে ক্ষণস্থায়ী কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যেমন, মাথা ব্যাথা ও বমি বমি ভাব। কেননা সবজিভোজী হওয়ার ফলে দেহ ফ্যাট রিজার্ভে জমে থাকা বিষ বের করে দিতে থাকে। প্রচুর পরিামাণে তাজা ও অপ্রক্রিয়াজাত ফল খেলে দেহ থেকে বিষ বের হয়ে যেতে থাকে দ্রুত।
৬. সাইনাস নিষ্কাশন বৃদ্ধি
সবজিভোজী হওয়ার পর আপনার দুধও ছেড়ে দিতে মন চাইবে। আর ল্যাকটোজ গ্রহণ বন্ধ করে দিলে সাইনাসের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও কমে আসবে। ফলে হজমক্ষমতারও উন্নতি ঘটবে।
৭. ভালো ঘুম হবে
যেসব খাবার দ্রুত শক্তি পোড়ায় সেসব আপনাকে সারারাত ধরে জাগিয়ে রাখতে পারে। আর উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবার- কলা, মিষ্টি আলু, লাউজাতীয় তরকারি, বাদাম ও পাতাকপিতে থাকে ভিটামিন বি৬ এবং ট্রাইটোফেন যা ঘুমের গুনগত বাড়াতে সহায়ক।
৮. কোলোন বা মলাশয়ের ক্যান্সার
পূর্ণশস্যজাতীয় খাবার এবং তাজা ফল ও শাক-সবজি কোলোন বা মলাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। আর সবজিভোজী হওয়ার সবচেয়ে বড় উপকারগুলোর একটি এটি।
সূত্র : বোল্ডস্কাই