বাংলাদেশ জুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য প্রাকৃতিক আর মনুষ্যনির্মিত দর্শনীয় স্থান। মূলত এই স্থানগুলোর কথা মাথায় রেখেই প্রতি শুক্রবারের আয়োজনে থাকছে একটি করে দর্শনীয় স্থানের বিবরণ। আর আজ এতে প্রকাশিত হলো যশোরের সাঁগরদাড়ি গ্রাম-এর কথা।
বাংলা সাহিত্য তথা বাংলা কবিতার অন্যতম এক প্রবাদপুরুষ হিসেবেই যুগ যুগ ধরে স্মরণীয় হয়ে আছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। আর খ্যাতনামা এই কবির স্মৃতিকে ধারণ করেই দাঁড়িয়ে আছে যশোর থেকে মাত্র চল্লিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাগরদাঁড়ি গ্রামটি। কবির স্মৃতিকে স্মরণ করতে এবং কবির কবিতায় বর্ণিত সাগরদাঁড়ি ও কপোতাক্ষ নদের খোঁজে প্রতি বছর অনেক পর্যটকই ভিড় করেন সাগরদাঁড়ি গ্রামে অবস্থিত কবির বাড়ি ও অন্যান্য স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোতে।
সাগরদাঁড়িতে অবস্থিত মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি দেখতে চাইলে আপনাকে দেশের যেকোনো স্থান থেকে প্রথমে যশোরে এসে নামতে হবে। তারপর যশোর থেকে বাসে করে কেশবপুর নেমে সেখান থেকে সিএনজি বা মাইক্রোবাসে সহজেই পৌঁছানো যাবে সাগরদাঁড়িতে।
কবির বাড়িতে ঢোকার জন্য টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকলে প্রথমেই চোখে পড়বে একটি পুকুর। আর এই পুকুরের পাড়েই একটি ফলকে উত্কীর্ণ রয়েছে কবির সেই বিখ্যাত কবিতার পংক্তিগুলো-'দাঁড়াও,পথিক বর জন্ম যদি তব বঙ্গে!
তিষ্ঠ ক্ষণকাল!' এই ফলক আর পুকুরকে পাশ কাটিয়ে একটু সামনে এগুতেই চোখে পড়বে হালকা হলুদ ও সাদা রঙের দুটিভবন।
মধূসুদনের জীবদ্দশায় এই বাড়িগুলোর এমনতর রূপ না থাকলেও পরবর্তী সময়ে তা সংস্কারের মাধ্যমে এভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাড়িতে ঢোকার পর দেখা যাবে মোটামুটি লম্বা ধাঁচের একটি সুদৃশ্য পুকুর। পুকুরের চারপাশ ঘিরে রয়েছে বেশ বড় ও পুরোনো কিছু আমগাছ। অনেকের মতে, এ আমগাছগুলো না কি কবির আমলেও ছিল। পুকুর পাড়ের শানবাঁধানো ঘাট আর আমগাছের ছায়ায় বসে থাকলে দেহ-মন যেন অনেকটাই জুড়িয়ে যায়।
তবে এখানে খানিকটা বিশ্রাম নেওয়ার পর কবি বাড়ির অন্দরমহলেও একবার ঢুঁ মারা চাই। এখানে সযত্নে রাখা আছে কবি ওতার পরিবারের সদস্যদের ব্যবহার করা বিভিন্ন সামগ্রী যেমন: দা, আলনা, খাট, থালা, কাঠের সিন্দুক, কবির লিখিত পান্ডুলিপি, পারিবারিক ছবি, কবির বন্ধুদের ছবিসহ নানা কিছু।
এখাানে বাড়ি ও তার আশপাশ ঘুরে দেখার পর ঘুরে আসতে পারেন দত্ত বাড়ির নদীর ঘাট থেকেও। কপোতাক্ষ নদের তীরের যে স্থানটিতে কবি শেষবার এসেছিলেন সেই স্থানটিকেই পরবর্তী সময়ে পর্যটকদের জন্য সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়।
কথিত আছে, মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে কলকাতা থেকে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সাগরদাঁড়িতে মায়ের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন মধুসূদন। কিন্তু ধর্মান্তরিত হওয়া মধুসূদনকে নানা সংস্কারের কারণে দেখা করতে দেননি তার বাবা।
আর তাই এই কপোতাক্ষ নদীর তীরে তিনদিন তাবু ফেলে অপেক্ষা করার পর স্মৃতি বিজড়িত এই বিদায় ঘাট দিয়েই কোলকাতায় ফিরে যান কবি। সাগরদাঁড়ি গ্রাম ও কবির বাড়ি সারাবছরই কমবেশি দর্শণার্থীদের জন্য খোলা থাকে। তবে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে কবির গ্রাম সাগরদাঁড়িতে মধুমেলা বসে বলে চাইলে যেতে পারেন সে সময়টাতেও।