বলা হয়ে থাকে, সুখ এবং কাজ- সবসময় হাতে হাত এগিয়ে চলে না। চলুন এর মোকাবেলা করা যাক।
২০১৩ সালে বিশ্বের প্রায় ১৮ মিলিয়ন লোকের ওপর পরিচালিত এক গ্যালাপ গবেষণা থেকে জানা যায় যে, এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে মাত্র ১৩ শতাংশ মানুষ হাসিখুশিভাবে তাদের কাজ করছে।
গবেষণায় এটিও জানা যায় যে, যারা কর্মক্ষেত্রে নিজেদেরকে প্রফুল্ল রাখে বা হাসিখুশি থাকে তারা তাদের আশেপাশের অসুখী সহকর্মীদের তুলনায় ৩৬ শতাংশ বেশি অনুপ্রাণিত থাকে, ছয়গুণ বেশি সক্রিয় থাকে এবং তারা অন্যদের তুলনায় দ্বিগুণ উৎপাদনশীল।
জিনগতভাবে একজন মানুষের মধ্যে প্রফুল্লতার হার ৫০ শতাংশ। বাকিটা নিজের ইচ্ছা এবং চেষ্টার ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ প্রফুল্ল থাকার বিষয়টা যখন নিজের জন্য, তখন কোন কাজ আপনাকে আনন্দ দেয় সেটা জেনে নেওয়াটা জরুরি। একবার যখন আপনি আপনার সুখে থাকার পথ খুঁজে পেয়ে যাবেন তখন অন্য সব কিছু নিয়ে ভাবনা চিন্তার দরকার পড়বে না।
নিজেকে নিজে সুখী রাখা শুধু আপনার কর্মক্ষমতাকেই বৃদ্ধি করবে না বরঞ্চ এটি স্বাস্থ্যের জন্য ও উপকারী।
সুখী মানুষদের মধ্যে যে জিনিস বা গুণ কাজ করে সেটি হল তাদের আবেগজনিত বুদ্ধিমত্তা। ট্যালেন্ট স্মার্টে প্রায় ১ মিলিয়ন এর অধিক মানুষের মানসিক বুদ্ধিমত্তা নিয়ে একটি পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। ফলাফলে দেখা যায় উচ্চ বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ব্যক্তিরা এই টেস্ট এ টিকে থেকেছে।
মানসিক ভাবে বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ কর্মক্ষেত্রে কিভাবে নিজের সুখ সৃষ্টি করে থাকে তার ১৬টি দুর্দান্ত উপায় নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হাফিংটন পোস্ট। দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্বে জেনে নিন, ৮টি উপায়।
আপনার সুখের নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতেই : একটা কর্মক্ষেত্রে আপনার দুইটা রাস্তা খোলা থাকে। এক হয় আপনাকে আপনার মনের মতো আরেকটা চাকরি খুঁজে নিতে হবে অথবা যেখানে কাজ করছেন সেখানেই আপনার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। যেভাবেই হোক আপনার আনন্দ হাসিখুশি আপনার হাতেই। আর কেউ সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তাই যখনি মনে করবেন আপনি কাজে আটকে গেছেন তখনি নিজের নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবুন। কাজ ও জীবন সহজ হয়ে যাবে।
নিয়ন্ত্রণহীন বিষয়কে উপেক্ষা করুন : গ্রীসের অর্থনৈতিক সমস্যা কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারকে প্রভাবিত করবে কিংবা আপনার কোম্পানি কঠিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে একত্রিত হয়ে কিভাবে কাজ করবে এ বিষয়ে জ্ঞান থাকা ভালো। তবে এই বিষয় সম্পর্কে জানা আর সেটা নিয়ে নিজের মাথা ঘামানো বা চিন্তা করা দুই মেরুর জিনিস। সুখী মানুষরা অনেক কিছু জানে ও খোঁজ রাখে। কিন্তু তারা কখনোই তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরের বিষয়ে গুরুত্ব দেয় না।
অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা করবেন না : যখন আপনি অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করবেন তখন আপনার পক্ষে নিজেকে নিজে সুখী রাখার উপায়গুলো আর সাহায্য করবে না। কোনো কাজের জন্য যদি আপনি শান্তি অনুভব করেন কিংবা বাহবা পান তাহলে সেটিকে যথাসম্ভব অন্যের মন্তব্য ও মতামত থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন।
অন্যের মতামত কিংবা বক্তব্যের কারণে নিজের আবেগ বা ক্ষোভ ধরে রাখতে না পারলেও অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা করবেন না। কারো কথায় কান না দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। একটি কথা মনে রাখা দরকার, অন্যের কথার ভিত্তিতে আপনি আপনার ভালো মন্দের বিচার করবেন না। তাহলেই সুখী থাকা সম্ভব।
নিজেকে পুরস্কৃত করুন : কঠোর পরিশ্রম সাফল্যের জন্য আবশ্যক। কিন্তু কাজের ফাঁকে সামান্য বিরতি না নিলে তা হিতে বিপরীতই হয়ে দাঁড়াবে। রেডিওলজিস্টদের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা রোগীর চার্ট পর্যবেক্ষণের আগে ছোট পুরস্কার পেয়েছেন তারা আরো নির্ভুল নির্ণয় করেছেন।
এক কার্নেল গবেষণায় জানা যায় যে, ছোট ছোট পুরস্কার মানুষকে আরো উদার, বন্ধুত্বপূর্ণ ও সুখী করে তোলে। সেই সঙ্গে এই পুরস্কার একজন ব্যক্তিকে তার কাজকে আরো উন্নয়নশীল ও নির্ভুল করে তোলে। পুরস্কার মস্তিষ্কের মধ্যে আনন্দের বার্তা পাঠায়। সেটা যদি স্বপ্রণদিত হয় তাহলেও।
কাজের মধ্যেও ব্যায়াম করুন : ১০ মিনিটের জন্য হলেও যদি একজন ব্যক্তি তার শরীরকে নাড়াচাড়া করেন তাহলে তার শরীর থেকে গামা-অ্যামিনোবায়োটিক অ্যাসিড নামক শুষ্ক নিউরোট্রান্সমিটার রিলিজ হয়। ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা যায় যে, কর্মদিনের মধ্যেও যারা ব্যায়াম করে তাদের সময়ানুবর্তিতা, মানসিক অবস্থা এবং কাজের গতি উভয়ই বৃদ্ধি পায় এবং সুস্থির থাকে।
কাউকে বিচার করা থেকে বিরত থাকুন : কাউকে বিচার করা এবং তার সম্পর্কে খুবই বাজে কথা বলা বা তাকে হেয় করে কথা বলা ভালো কাজ নয়। কথা বলার সময় ভালো লাগলেও কিছুক্ষণ পরে নিজে থেকেই আপনার মধ্যে অনুশোচনাবোধ জেগে উঠবে। যদি কখনো কারো সম্পর্কে আপনি নেতিবাচক কোনো কথা বলতে চান তাহলে এর আগে ভেবে নিন যে, আপনি কি চান অন্য কেউ ও আপনার সম্পর্কে এমন কথা বলুক?
যুদ্ধক্ষেত্র বাছাই করুন : মানসিক ভাবে বুদ্ধিদীপ্ত মানুষেরা জানেন আগামী কালকের দিনটা যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার উপায় কি। নিয়ন্ত্রণহীন আবেগ যুদ্ধে আপনার চলার পথে বাঁধার সৃষ্টি করবে। যার ফলে মানসিকভাবে আপনার ভেঙে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
যখন আপনি আপনার অনুভূতিগুলোকে জানার চেষ্টা করবেন তখনি আপনাকে আপনার যুদ্ধের পথ বেছে নিতে হবে। আর সেটাই আপনাকে যুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করবে।
নৈতিক মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিন : সাফল্যের নামে নৈতিক মূল্যবোধের সীমা অতিক্রম করা অসুখী হওয়ার একটি নিশ্চিত পথ। ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও বিবেকবোধকে লঙ্ঘন করলে পরবর্তীতে অনুতাপ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হবে, যা আপনার কাজ থেকে বিরত রাখবে।
যে কাজ আপনার কাছে করাটা নেতিবাচক মনে হবে সে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। অন্যের কথায় কিংবা পরামর্শে নিজের মতাদর্শ থেকে সরে আসবেন না। কাজ করতে যেয়ে যদি কখনো মনে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় তাহলে সময় নিন। আপনার মতাদর্শকে প্রাধান্য দিন। সেটির সঙ্গে আপনার কাজের মতাদর্শকে মিলিয়ে দেখুন। এটি আপনার নৈতিক অবস্থানকে শণাক্ত করতে সাহায্য করবে।