গরমের মধ্যে বৃষ্টি শান্তির পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে ঠিক, তবে সেই সঙ্গে আছে মৌসুমি জ্বরের আশঙ্কাও।
লক্ষণ: ঋতু পরিবর্তনের কারণে জ্বর, সর্দি-কাশি, শরীর ব্যথা ইত্যাদিকেই মৌসুমি জ্বর ধরা হয়। হাঁচি-কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হয়ে থাকা, সারা শরীরে ব্যথা, মাথা ভার হয়ে থাকা, খাওয়ায় অরুচি, মুখে তিতাভাব ইত্যাদি ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ।
বর্ষায় মশার উপদ্রব বেশি হয়। এই কারণে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুর প্রকোপও বাড়ে। আর এবছর দেশে চিকনগুনিয়া’র প্রকোপ ছড়িয়েছে ব্যাপক হারে। বর্তমানে বেশিরভাগ রোগীই জ্বর নয়, হাড়ের জোড়ে অসহ্য ব্যথা নিয়ে আসছেন যা চিকনগুনিয়া’র বিশেষ উপসর্গ।
সতর্কতা: বৃষ্টিতে ভিজতে পছন্দ করেন কমবেশি সবাই। তবে এই সময়ে সেই আনন্দ ত্যাগ করতে হবে। তাই বাইরে বেরোনোর সময় ছাতা, রেইনকোট সঙ্গে রাখুন। যাত্রাপথে বৃষ্টিতে আটকে গেলে যতটুকু সম্ভব মাথা ভেজা এড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। নিরাপদ স্থানে পৌঁছে মাথা মুছে নিতে হবে এবং ভেজা কাপড় পাল্টে ফেলতে হবে। বৃষ্টিতে ভেজার পর সম্ভব হলে অবশ্যই গোসল করতে হবে। আর গোসলের সুযোগ না থাকলে কমপক্ষে চুল ধুয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আদা, লেবু দিয়ে লাল চা, গরম দুধ, সুপ ইত্যাদি খেলে ভালো লাগবে।
মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে মশার কয়েল, অ্যারোসল, মশারি, ধুপ, ওডোমস ইত্যাদি নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে। আর দিনের বেলায় সাবধানতাটা বেশি প্রয়োজন। কারণ ডেঙ্গু আর চিকনগুনিয়া’র জন্য দায়ী এডিস মশা দিনের বেলা কামড়ায়।
ঘরে মৌসুমি জ্বরে আক্রান্ত রোগী থাকলে তাকে ভিন্ন ঘরে রেখে পরিচর্যা করা উচিত। মৌসুমি জ্বর ছোঁয়াচে নয়, তবে রোগীর হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে। মশার ব্যাপারেও এসময় চাই বাড়তি সতর্কতা।
আক্রান্ত হলে করণীয়: বিভিন্ন ধরনের জ্বার কমানোর ওষুধ রয়েছে। আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শে জ্বর কমানোর ওষুধ খেতে হবে। মনে রাখা উচিত, ওষুধ যতটা সম্ভব কম সেবন করাই ভালো। অনেকেই সাত দিনের বেশি জ্বর থাকলে কিংবা ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রির বেশি জ্বর হলে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করে দেন। যা প্রয়োজনীয় নয়, বরং হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ধরনের ওষুধ সেবন করা যাবে না।
রোগীর মাথায় পানি ঢালা এবং কপালে জলপট্টি দেওয়া উপকারী। প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে হবে। পানির পাশাপাশি ডাবের পানি, স্যালাইন, ফলের সরবত ইত্যাদি পান করতে হবে। জ্বর সারাতে ভিটামিন-সি আছে এমন ফল যেমন- আনারস, জাম্বুরা, কমলা, আমড়া, লেবু ইত্যাদি অত্যন্ত উপকারী।
জ্বরে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে যে, শুধুই ভাইরাস জ্বর, নাকি তা টাইফয়েড, জন্ডিস, নিউমোনিয়ার ইত্যাদির দিকে মোড় নিচ্ছে।