মেসে থাকা ছেলেরা পৃথিবীর জঘন্যতম খাবার খেতেও সক্ষম।কারন,মেসের খাবারের মত নিকৃষ্ট স্বাদের খাবার পৃথিবীর আর কোথাও হয় না।
মেসে থাকা ছেলেদের পেটে ডিমের খামার আর আলুর গোডাউন তৈরি হয়।আলু আর ডিম মেসের খাদ্য তালিকায় সবার উপরে থাকে।
রাত বাড়োটার পরে ঘুমতে যাওয়া আর বেলা করে ঘুম
থেকে ওঠা-এটা এদের সাধারন একটা নিয়ম।
মেসের ছেলেরা কার্ড খেলতে পটু হয়।এরা ঘন্টার পর
ঘন্টা কার্ড খেলে কাটিয়ে দিতে পারে।
মাসের প্রথম ১০ দিন এরা চলে রাজার হালে আর শেষ ১০ দিন এদের ধার-দেনা করে চলতে হয়।
এরা ১টা সিগারেট ৩ জন মিলে খেতে অভ্যস্ত।
মেসের খালা/বুয়া হলো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অপেক্ষা অধিক ক্ষমতা সম্পূর্ন।এদের বুয়ার ঝারি হজম করতে হয় উঠতে বসতে।
মেসের ছেলেরা ১ বালতি পানি দিয়ে দিব্যি ২ জন মিলে গোসল করে, তবুও পানি অবশিষ্টই থেকে যায়।
এরা ভীষন অলস টাইপের হয়।বিছানা হলো এদের
প্রিয় জায়গা।
এদের কাছে সবচাইতে বিরক্তিকর বিষয় হলো কাপড়
কাচা।
পরীক্ষার সময়সূচি বের হলেই কেবল এদের মাঝে ছাত্রসত্তা জাগ্রত হয়।আর বাকিটা সময় পড়ি পড়ি করেও এদের তেমন কিছুই পড়া হয়ে ওঠে না।
বাড়তি টাকার জন্য বাপের কাছে মিথ্যা বল,মিথ্যা অজুহাত দেওয়া এদের কাছে ডাল ভাতের মতই সহজ
বিষয়।
মেসের জন্য বাজার করতে গিয়ে পাঁচ দশ টাকা নিজের পকেটে ভরতে এরা ভুল করে না কখোনই।
একজন অন্যজনের পেস্ট,শ্যাম্পু,রেজার নিজের মত
করে ব্যাবহার করে।
তেলাপোকা,ছারপোকা,টিকটিকি হলো একটা মেসরুমের নিয়মিত বাসিন্দা।এগুলোর সাথে সখ্যতা করেই থাকতে হয় এদের।
একজন সরল ছেলেও মেসে আসার পর বেশ কিছু গুন
অর্জন করে যার মাঝে অন্যতম হলো চাপাবাজি।
এরা টিউশনি করে মোবাইল খরচ,হাত খরচের টাকা
যোগার করে।
প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে মেসের ভাড়া বাড়িয়ে দেয় মেসের মালিক।আর সেটাকে মাথা পেতে নিতে এরা বাধ্য থাকে।
গ্যাঞ্জাম,চিল্লাচিল্লি,বেসুরের গানের শব্দের মধ্যেই এরা মনোযোগ সহকারে পড়তে অভ্যস্ত।
থার্টি ফাস্ট নাইট,পহেলা বৈশাখ এই অনুষ্ঠানগুলো এরা ঘটা করে পালন করে।মেসে এইসব উৎসব উপলক্ষ্যে জাম্পেশ খাওয়া দাওয়া হয়।
গভীর রাতে মুড়িপার্টি মেসের একটা অতি পরিচিত রিতী।চাঁদা তুলে এরা এই মুড়িপার্টির আয়োজন করে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলার দিন এরা সব কাজ ফেলে টিভির সামনে বসে দলবেঁধে খেলা দেখে। বাংলাদেশের জয়ে এরা গলাফাটায় আবার হারে অশ্রু ঝড়ায়।
এরা বেশ আড্ডা প্রিয় হয়।সময় পেলেই গিটার,হাড়ি,থালা নিয়ে গানের আসর জুড়ে বসে।
মেসের পাশের বাড়িগুলো এদের হট্টগোলে অতিষ্ঠ
হয়ে প্রায়ই মেস মালিককে নালিশ করে।তবুও এদের
আনন্দ,হট্টগোল থেমে থাকে না।
প্রেমিক,অতি পড়ুয়া,দেবদাস,কবি-এসব বিশেষ
বৈশিষ্ট্যধারী ছেলে প্রতিটা মেসেই কমবেশি পাওয়া যায়।
ফেয়ার এন্ড লাভলি ক্রিম,ফেস ওয়াস,হেয়ার জেল
ইত্যাদি এদের রুমে পাওয়া যাবেই।
মেসে থাকা ছেলেদের কাছে প্রায়শই সাইকেল দেখা যায় বিশেষত যারা টিউশনি করে তাদের কাছে তো অবশ্যই।
শেষ কথা:
মেস জীবন অনেক কষ্টের।এখানে থাকা খাওয়ার
সমস্যা প্রকট।তাছাড়াও আপনজনদের ছেড়ে একা এক
থাকতে হয়।
তবুও মেসে থাকার আনন্দটাই অন্যরকম,রোমাঞ্চকর।
এরা সংগ্রাম করে,কষ্ট করে বেঁচে থাকে।এজন্য মেসে থাকা ছেলেরা দৃঢ়চিত্তের,সাহসী,সংগ্রামী,বাস্তববাদী হয়।