রোজা রাখা নিয়ে অনেকেই নানা রকম দ্বিধায় পড়েন। বিশেষ করে, বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যায় রোগীরা দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন রোজা রাখার বিষয়টি নিয়ে। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, বেশির ভাগ রোগব্যাধি নিয়েই কিন্তু রোজা রাখা যায়। রোজা শুরু হওয়ার আগে থেকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রস্তুতি নিলে সহজ ও নিরাপদ উপায়ে রোজা পালন করা যায়।
রোজা রাখলে মানব দেহে কী ঘটে?
সেহেরির সময় খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গেই শরীর অনশন অবস্থায় (ফাস্টিং ) যায় না। সর্বশেষ খাবার গ্রহণের মোটামুটি চার ঘণ্টা পর ফাস্টিং পর্যায় শুরু হয়। অর্থাৎ খাবার গ্রহণের দুই ঘণ্টা পর থেকে ওই খাবার শরীরে হজম হতে শুরু করে।
এটি শক্তি সরবরাহ করতে থাকে। আট ঘণ্টা পর ওই খাবারের সরাসরি প্রভাব শরীরে আর থাকে না। সেহরির খাবারের গ্লুকোজ আট ঘণ্টা পর শেষ হলে, শরীরে সঞ্চিত চর্বি ভেঙে শক্তি তৈরি হয়। এ কারণেই রোজায় শরীরের ওজন খানিকটা কমে। তবে শরীরের প্রোটিন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
শরীরের বাড়তি এই চর্বি কমে যাওয়ার কারণে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কয়েক দিন রোজা পালনের পর রক্তে এনডোরফিনসের মতো কয়েকটি হরমোনের মাত্রা বাড়ে। এটি রোজাদারদের শরীর ও মনকে প্রফুল্ল রাখে।
রোজার আগে রোগীরা যেভাবে প্রস্তুতি নেবেন
রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা (খাবার আগে ও পরে), রক্তের লিপিড/চর্বি, লিভার ও কিডনি, হার্টের কার্যকারিতা ই্ত্যাদি কেমন আছে, সেগুলোর পরীক্ষা করতে হবে। রোগীর রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখা যাবে।
রোগীর হাইপোগ্লাইসিমিয়া অথবা হাইপারগ্লাইসিমিয়ার ঝুঁকি হতে পারে কি না সেটি বুঝতে হবে। এই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটাই শ্রেয়।
রমজান শুরু হওয়ার আগে খাদ্য ও তরল খাবার সম্পর্কে ডাক্তারের কাছ থেকে চার্ট করে নিন। মুখে গ্রহণের ওষুধের ধরন ও মাত্রা পরিবর্তন করতে হবে কি না তা জেনে নিন।
পেপটিক আলসার, কিডনি রোগ ও উচ্চ রক্ত চাপের রোগীদের ইফতারের সময় বেশি ভাজা-পোড়া, তৈলাক্ত ও লবণ যুক্ত খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো । রোজার সময় নিজে নিজে ওষুধের ডোজ সমন্বয় না করে আগে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সমন্বয় করতে হবে।
রোগী ও রোগীর সঙ্গে বসবাসকারীকে রক্তে গ্লুকোজের কমে বা বেড়ে যাওয়ার লক্ষণগুলো জানতে হবে এবং তার সমাধান শিখতে হবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার, ঢাকা।