সাধারণত বিশ্বাসের ওপর ভর করেই বিয়ের মাধ্যমে দুজন মানুষ ভালোবেসে একসঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি নেয়। বিয়ে কেবল দু’জন মানুষ নয়, বরং দুটো পরিবারের মধ্যেই একটা ভালোবাসার বন্ধন তৈরি করে। কিন্তু পথ চলতে গিয়ে যখন একজন আরেকজনকে ঠকায়, কিংবা কোনো কিছু গোপন করে তখনই নেমে আসে অবিশ্বাস। কোন সম্পর্কে একবার যদি অবিশ্বাস চলে আসে তাহলে বিচ্ছেদে রূপ নিতে বেশি সময় লাগে না।
বর্তমানে জীবনের যান্ত্রিকতা ও ব্যস্ততা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেড়েই চলেছে। কেন এ হার দিন দিন বাড়ছে- এটা নিয়ে নানা গবেষণা চালিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য তারা কিছু কারণকে মৌলিক কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা এমন ছয়টি কারণের কথা বলেছেন যা একটি দাম্পত্য জীবনে বিচ্ছেদ ঘটাতে চাবিকাঠির কাজ করে। এগুলো হলো...
অর্থনৈতিক অবস্থা
কোনো যুক্তি বা বাস্তবতা দিয়ে সম্পর্কের মধ্য থেকে অর্থনৈতিক বিষয়টিকে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। প্রতিটি সম্পর্কই কোনো না কোনোভাবে শেষ পর্যন্ত অর্থনৈতিক অবস্থার দ্বারা নির্ধারিত হয়। তাইতো বিশেষজ্ঞরা বলেন, দুজনের মাঝে সম্পর্ক যত গভীরই হোক না কেন, অর্থনৈতিক অবস্থার ভারসাম্য না থাকলে সমস্যা হবেই। কাজেই বিচ্ছেদ এড়াতে অর্থনৈতিক দূরাবস্থা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করুন।
যোগাযোগে বিচ্ছিন্নতা
যোগাযোগ না থাকায় দুজনের মধ্যে হয়তো কোন ঝামেলা হয় না, কিন্তু দূরত্ব বেড়ে যায়। কথা না বলা কিংবা যোগাযোগ না হওয়াই এর জন্য যথেষ্ট। এ ধরনের পরিস্থিতি এটাই প্রমাণ করে, আপনারা দুজনই আর বোঝাপড়ার বিষয়ে আগ্রহী নন। এই পরিস্থিতির পরবর্তী পদক্ষেপে সাধারণত ডিভোর্স নিতে দেখা যায় দম্পতিদের। তাই বিচ্ছেদ এড়াতে দুজনের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।
ঘৃণা-অবজ্ঞা
দুজনের মাঝে বোঝাপড়া না থাকলে ঘৃণা-অবজ্ঞার মতো বিষয় সৃষ্টি হতে পারে। এ সম্পর্কে বিয়ে এবং যৌনবিষয়ক থেরাপিস্ট ড. কাট ভ্যান কির্ক বলেন, দুজনের প্রতি দুজনের বিন্দুমাত্র আবেগ কাজ না করার অর্থ এখানে ঘৃণার আগমন ঘটেছে। আর তা সম্পর্ক শেষের লক্ষণ। বিচ্ছেদ এড়াতে তাই দুজনের বোঝাপড়া আরও মজবুত করুন।
সম্পর্ককে বিচ্ছিন্নভাবে লালন করা
দুজন সংসার পেতেছেন ঠিকই, কিন্তু এর যত্নআত্তি করছেন যার যার মতো করে। এতে দুজনের মধ্যে ধীরে ধীরে দুই ধরনের মানসিকতা তৈরি হবে। এর ফলে একই বিষয়ে দুজনের দুই ধরনের মতামত সৃষ্টি হবে। এ ধরণের সম্পর্কে খুব দ্রুত টানাপড়েন আসে। কাজেই সম্পর্ককে বিচ্ছিন্নভাবে লালন করা থেকে একেবারেই বিরত থাকুন।
মিথ্যাচার
মিথ্যাচার খুবই মারাত্মক বিষয়। এর কারণেই বিশ্বস্ততা নষ্ট হয়। আর একবার বিশ্বাস ভঙ্গ হলে সম্পর্কের ভিত্তিও নষ্ট হয়। শেষ পর্যন্ত তা সংসারকে বিবাহ বিচ্ছেদের দিকে নিয়ে যায়। কাজেই সততা ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে সম্পর্কের লালন করুন।
অন্তরঙ্গতার অভাব
দুজনের মধ্যে শুধু মানসিক বন্ধন থাকলেই চলবে না, দৈহিক অন্তরঙ্গতাও থাকতে হবে। স্পর্শ, জড়িয়ে ধরা, হাত ধরা ইত্যাদি দুজনের মধ্যে সম্পর্ককে অনেক গভীর করে তুলতে পারে। এর সঙ্গে দারুণ গুরুত্বের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে যৌনতা। এসবের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হলে সম্পর্ক ভাঙতে বাধ্য। কাজেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে আগে থেকেই সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।