বুকে ব্যাথায় ভুগছেন? এই ব্যাথারও রয়েছে নানা রকমফের। কোনোটা জটিল কোনোটা জটিল নয় অতোটা। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ডা. আবদুল্লাহ শাহরিয়ার, সহযোগী অধ্যাপক, শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ, এনআইসিভিডি।
অ্যানজিনা পেইন
হার্টের সমস্যায় বুকে ব্যথা হলে যাকে আমরা অ্যানজিনা পেইন বলে থাকি, এটা বুকের ঠিক মাঝখানে অনুভূত হয়, বাম পাশে নয়। হার্টে রক্তস্বল্পতার কারণে যে ব্যথা হয়, তা বুকের মাঝখান থেকে কখনও কখনও গলা, চোয়াল, পিঠের পেছনে এবং বাম বাহুতে ছড়িয়ে পড়ে। রোগী সাধারণত বুকে ব্যথার চেয়ে 'অস্ব্বস্তি' বা 'কেউ বুকটা চেপে ধরেছে' এ কথা বেশি বলে থাকেন। ব্যথার পাশাপাশি শ্বাসকষ্টও হতে পারে।
লক্ষণসমূহ
হার্টের ব্যথার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, চলাফেরা, বিশেষ করে সিঁড়ি ভাঙতে গেলে ব্যথা তীব্রতর হতে থাকে এবং বিশ্রাম নিলে ব্যথা অনেকটা কমে আসে। টেনশন করলে কিংবা একবারে বেশি পরিমাণ খেলে, এমনকি ঠাণ্ডা বাতাসের কারণেও অনেকের এ ধরনের ব্যথা বাড়তে পারে। হার্টের সমস্যায় বুকে ব্যথার পাশাপাশি ঘাম হতে পারে, বমি বমি ভাব কিংবা বমি হতে পারে।
পেটের আলসার ও বুকে ব্যথা
হাইপার এসিডিটি বা পেটের আলসার বা পেপটিক আলসারের সমস্যাকে সাধারণ মানুষ গ্যাস্ট্রিক বলে থাকেন। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায়ও বুকে ব্যথা হতে পারে। এ ব্যথা সাধারণত বুকের মাঝবরাবর নিচের দিকে অনুভূত হয়। রোগের তীব্রতায় অনেক সময় তা পুরো বুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভাজাপোড়া খেলে, খালি পেটে থাকলে এ ধরনের ব্যথা আরও বেড়ে যায়। রেনিটিডিন বা ওমিপ্রাজল গ্রুপের ওষুধ খেলে এ জাতীয় ব্যথা কমে যায়। হার্টের ব্যথা কখনও এসব ওষুধে ভালো হয় না।
বুকের হাড় ও মাংসের সমস্যা এবং বুক ব্যথা
বুকের হাড়ে সমস্যা হলে বুকে ব্যথা হতে পারে। বুকের আর্থ্রাইটিস, হাড়ের ইনফেকশন বা প্রদাহ হলে ব্যথা হয়। এ ছাড়া বুকের মাংসে আঘাত লাগলে বুকে ব্যথা হতে পারে। এ ধরনের ব্যথা নড়াচড়া করলে বাড়ে এবং ব্যথানাশক ওষুধ খেলে কমে। যারা খেলাধুলা করেন, ড্রাইভিং এবং ভারী কাজ করা যাদের পেশা, তাদের বুকে ব্যথা হতে পারে। যারা হঠাৎ ব্যায়াম শুরু করেন, প্রাথমিক অবস্থায় তাদেরও বুকে ব্যথা হতে পারে। এসবই বুকের হাড় ও মাংসের সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। বিশ্রাম নিলে, ব্যথার ওষুধ খেলে এ জাতীয় ব্যথা সেরে যায়।
খাদ্যনালির সমস্যা ও বুকে ব্যথা
খাদ্যনালির সমস্যায়ও বুকে ব্যথা হতে পারে। যেমন- খাদ্যনালির ইনফেকশন, খাদ্যনালির স্পাজম ইত্যাদি কারণে বুকে ব্যথা হয়। চিত হয়ে শুয়ে থাকলে, খাওয়া ও পানি পান করার সময় এ ব্যথা বাড়তে পারে। এ ব্যথার ধরন অনেকটা রক্তস্বল্পতাজনিত বুকে ব্যথার মতোই এবং অনেক সময় ব্যায়াম করলে বেড়ে যেতে পারে।
শ্বাসনালির সমস্যা ও বুকে ব্যথা
অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগে শ্বাসনালির স্পাজম হতে পারে। এ রোগে বুকে চাপ চাপ লাগে এবং বিশ্রাম নিলে কমে যায়। হার্টে রক্তস্বল্পতাজনিত ব্যথার সঙ্গে এ ব্যথার অনেক মিল আছে। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যথার পাশাপাশি কাশি, বুকে চিঁ চিঁ আওয়াজ হতে পারে। ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন- নিউমোনিয়া, ফুসফুসে পানি ঢোকা বা যক্ষ্মা ও ক্যান্সার ইত্যাদি রোগেও বুকে ব্যথা হতে পারে।
দুশ্চিন্তার সঙ্গী বুকে ব্যথা
যারা প্রায়ই টেনশনে ভোগেন, তারা সব সময় বুকে একটা চাপ অনুভব করেন। বিশ্রাম নিলে, রাতে ভালো ঘুম হলে এ ব্যথা কিছুটা কমে আসে। তাই এ ধরনের সমস্যা এড়াতে যতদূর সম্ভব দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করা উচিত। টেনশনের সবচেয়ে খারাপ দিক হলো, আগে থেকে হার্টের সমস্যা থাকলে টেনশনে তা আরও বেড়ে যায়। ছোট বাচ্চারা নিঃসঙ্গ অবস্থা, অনিশ্চয়তা, ভীতি বোধ, স্কুলভীতি, পরীক্ষাভীতি এসব কারণে বুকে ব্যথার কথা বলে থাকে।
আমাদের স্ব্বাস্থ্য সচেতনতা এখন অনেক বেড়েছে। তবে অতি সচেতনতা অনেক সময় বিড়ম্বনার কারণ হতে পারে। বুকে ব্যথাও এমন একটি বিষয়। অতি স্ব্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে সামান্য বুকে ব্যথায় আমরা বুঝে পাই না কী করব, কাকে দেখাব। মেডিসিন না হার্ট স্পেশালিস্ট, সবচেয়ে বড় স্পেশালিস্ট কে ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে আমরা খেই হারিয়ে ফেলি। এরপর লোকজনের অনাবশ্যক বাড়তি উপদেশ তো আছেই। তবে বুকের ব্যথা একেবারে মামুলি বিষয় নয়। মাথায় পানি ঢেলে অথবা বুকে তেল মালিশ করে যে সমস্যাটি দূর হবে তা-ও নয়। এ জন্য অযথা অস্থি্থর না হয়ে সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।